করোনার আতঙ্কের পাশাপাশি এই মুহূর্তে কিছু মানুষ চরম এক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে। সারাদেশের দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিক-দিনমজুরদের কী ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে চলেছে, সেটা কি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা একটুও ভাবছেন? সারাদেশের কমপক্ষে অর্ধ কোটি লোকের পেটে ভাত জোটে প্রতিদিনের উপার্জনে। অসাধু ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও করোনার সংক্রমণে গত ৪-৫ দিন ধরে রিক্সা-ভ্যান চালক থেকে শুরু করে সকলশ্রেণির দিনমজুর গৃহবন্দি; কাজে যেতে পারছে নাা। দেশের কর্তা ব্যক্তিদের ওদের নিয়ে কী ভাবনা আছে জানি না। ওরা পরিবার-পরিজন নিয়ে দু’মুঠো খেয়ে বাঁচবেন তো? সে ব্যবস্থা কি আমাদের দেশের কোনো মহান নেতা করার কথা ভাবছেন? বিচ্ছিন্নভাবে সামাজিক সংগঠনগুলো যা করছে, তাতে তো আর এত লোকের সংসার চলবে না। অথচ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ সব দেশেই সরকারের তরফ থেকেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের সরকার যে একেবারেই দিচ্ছে না, তাও কিন্তু নয়। কারণ আমাদের দেশের খেটে খাওয়া এই সব মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়।
যাইহোক ইসলাম ধর্মে এই দারিদ্র্য বিমোচনের সুব্যবস্থা দেয়া আছে। কিন্তু আমরা তো ইসলামের বুলি আওরাই মুখে, অন্তর দিয়ে নয়।
সামনেই রমজান মাস। যাকাত আদায়ের সময়। ইসলামে প্রতিটি স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা ফরজ করা হয়েছে। যদি সঠিকভাবে এ দেশের বিত্তবান ব্যক্তিরা যাকাতের অর্থ প্রদান করতেন, তবে দেশে কোন দরীদ্র থাকত না।
যাকাত হলো অন্যতম মৌলিক ইবাদত যা সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। যাকাত দিলে যাকাত দাতার সম্পদ কমে না, বরং বাড়ে। যাকাত কোন দয়া বা অনুগ্রহ নয়। এটা একটি মৌলিক ইবাদত। যাকাত দেয়া যেমনি ফরজ, তেমনি হিসাব করে আদায় করাও ফরজ। গরীবদের প্রাপ্ত যাকাতের অর্থ ধনীদের কাছে রেখে দেয়া কখনোই সমীচীন নয়। দুনিয়ার সকল সম্পদের মালিক আল্লাহ। আমাদের দায়িত্ব হলো তা ইনসাফের সাথে ব্যয় করা। ইসলামের যুগে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায় করা হতো, এখন হয় না। বিচ্ছিন্নভাবে শাড়ি, লুঙ্গি বিতরণের মাধ্যমে যাকাত দিলে হবে না। ইসলামের নির্ধারিত পন্থায় যাকাত দিতে হবে। যেন যাকাতের হক পরিপূর্ণভাবে আদায় হয়। যাকাতের পরিমাণ কম করে দিলেও হবে না।
সুতরাং দেশের এই ক্রান্তিকালে বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসুন। শতভাগ সততা নিয়ে যাকাত আদায় করুন। প্রতিটি গরিব ব্যক্তির যেমন কোনো না কোনো ধনী আত্মীয় থাকে, তেমনি প্রতিটি ধনী ব্যক্তিরও রয়েছে কিছু গরিব আত্মীয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক বিত্তবান ব্যক্তি যদি যাকাতের অর্থ দিয়ে নিজের দুই/চার জন করে (সামর্থ্য অনুযায়ী) নিকট গরিব আত্মীয় বা প্রতিবেশির দায়িত্ব নিতে পারি, তবে বাংলাদেশের কোন গরিব-অসহায় না খেয়ে মরবে না। এমনকি দেশে গরিব বলতেও কেউ থাকবে না।