আরিফ খানঃ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালি-সোনাতলা-সাঁথিয়া বাজার বাইপাস সড়কের উন্নয়ন কাজ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সড়কের কাজ শুরু হয়ে পরের বছর (২০২০ সাল) জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এ পর্যন্ত মাত্র অর্ধেক কাজ হয়েছে। সড়কের ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতা ও মামলার কারণে কাজ এভাবে বন্ধ হয় রয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় সড়কটি পড়ে থাকায় এলাকাবাসীর চলাচলের দুর্ভোগ চরমে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই গাগড়াখালি-সোনাতলা-সাঁথিয়া বাজার বাইপাস সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২০ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি আগের অপ্রশস্থ সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিছু অংশ পাকা করার পাশাপাশি সড়কের বর্ধিত অংশেরও কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু সড়কের বর্ধিত ও প্রশস্থ অংশের বেশির ভাগই ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সড়কের কাজে বাধা দেন। একাধিক স্থানে জমির মালিকেরা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করেন। এ ফলে সব মিলিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সড়ক নির্মাণের জায়গার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন ফেচুয়ান গ্রামের ১০ থেকে ১২ জন। তাঁদের মধ্যে মকবুল হোসেন ও সুজন হোসেন জানান, এই গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কের পুরো অংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন। জমির মালিকেরা সবাই সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর জন্য সরকারি বিধি মোতাবেক জমি অধিগ্রহণের দাবি তাঁদের। কিন্তু দাবি না মেনে জোড় করে সড়ক নির্মাণ শুরু করায় তাঁরা মামলা করেছেন।
এলাকাবাসী জানায়, ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রয়েছে। অল্প কিছু অংশ পাকা হলেও বেশির ভাগ অংশ নির্মাণজনিত ভাঙাচোরায় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে আগে রিকশা, ভ্যান যাতায়াত করতে পারলেও এখন সেগুলোও ঠিকমতো চলতে পারে না। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
সরেজমিনে পাটগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। এই কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও ওই এলাকাতেও ক্ষতিপূরণের দাবিতে জমির মালিকেরা মামলা করেছেন। ফলে সেখানেও বন্ধ হয়ে রয়েছে সড়ক নির্মাণের কাজ।
এলাকাবাসী জানান, এই স্থানে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আগে মাটির রাস্তা থাকায় কোনোমতে হাঁটাচলা যেত। কিন্তু এখন সড়কের জন্য খোঁড়াখুড়ি করায় ও মাঝখানে কালভার্ট তৈরি করে রাখায় চলাচল করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে এই স্থান দিয়ে যাতায়াতের আর উপায় থাকে না।
পাটগাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম সান বলেন, ‘এই সড়ক নিয়্যা আমরা ম্যালা স্বপ্ন দেখছিল্যাম। কিন্তু সড়কের কাজ বন্ধ হওয়ায় আমরা বন্দী হয়া রইছি। কাজ কবে শুরু বা শেষ হবি তা কেউই কব্যার পারে না।’
এদিকে সওজ সূত্রে জানা যায়, সড়কের বড় একটি অংশের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে আরও একটি অংশের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে অর্থ চাওয়া হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রল্লাদ কুমার বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। শুনেছি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তবে অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন হলেও বর্ষা মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ধরা সম্ভব হবে না।’
সওজের পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মনসুর আহমেদ বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে তা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হয়তো শিগগিরই ওই টাকায় অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। তবে এর বাইরে আরও কিছু জমি অধিগ্রহণ ও মামলা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তাই কবে এ সড়কের কাজ শেষ হবে এখনই বলা যাচ্ছে না।’