আরিফ খান: পাবনার বেড়া উপজেলার দুর্গম ঢালারচর ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের দাবি তাঁরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা দলের সদস্য। গতকাল (বুধবার, ১২ অক্টোবর) তাঁদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ইউনুস সরদার (২৮), জিলাল সরদার (৪০) ও মো. মাসুদ (২৫)। তাঁরা সবাই মিরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
তবে ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কোরবান আলী অভিযোগ করে জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা কেউই চরমপন্থী দলের সদস্য নন। আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরপুর বাজারে গিয়ে ওই তিনজনকে ইলিশ মাছ ধরার বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে লোকজন তাড়িয়ে দিয়ে ইউনুস সরদার ও মো. মাসুদের ডেকোরেটরের দোকানে অভিযান চালিয়ে ওয়ান শ্যুটার গান উদ্ধার দেখানো হয় ও শেষে তাঁদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মো. মাসুদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে চেয়ারম্যান জানান।
পুলিশ জানায়, বেশ কিছদিন ধরেই ঢালারচরে আবারও চরমপন্থীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এর ফলে পুলিশ সেখানে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই সূত্র ধরে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে পুলিশ চরমপন্থী দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের দাবি গ্রেপ্তারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা দলের সদস্য। তাঁদের মধ্যে ইউনুস সরদার হলেন দলের আঞ্চলিক নেতা। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে গুলিসহ একটি ওয়ান শ্যুটার গান উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
তবে ঢালারচর ইউপি চ্যেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কোরবান আলী দাবি করেন, গ্রেপ্তারকৃতরা কেউই সর্বহারা নন। তিনজনের মধ্যে জিলাল সরদার কৃষিকাজ করেন। আর ইউনুস সরদার ও মো. মাসুদ ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। মিরপুর বাজারে তাঁদের ডেকোরেটরের দোকান রয়েছে। ঘটনার রাতে ওসি পুলিশসহ মিরপুর বাজারে গিয়ে মাসুদ ও ইউনুসকে মুঠোফোনে ডেকে আনেন। এ সময় বাজারে অনেক লোক ছিলেন। ওসি লোকজন তাড়িয়ে দিয়ে ইউনুস ও মাসুদের দোকানে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার দেখান। পরে তাঁদের দুজনসহ বাজারের পাশে বাস করা জিলাল সরদারকে মিলিয়ে মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান।
কোরবান আলী বলেন, ‘তাঁরা (গ্রেপ্তারকৃতরা) কোনো সর্বহারা বা সন্ত্রাসী নন। সবাই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। এর মধ্যে মাসুদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওসি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁদের সর্বহারা বানিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, ‘চেয়ারম্যানের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এবং পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েই ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢালারচরে চরমপন্থীদের সক্রিয় হয়ে ওঠার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সর্বহারা দলের সক্রিয় সদস্য এবং তাঁরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে ইউনুসের নামে থানায় হত্যা মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য পদ্মা ও যমুনার চর নিয়ে গঠিত বেড়া উপজেলার দুর্গম ঢালারচর ইউনিয়ন এক সময়ে চরমপন্থীদের অভয়ারণ্য বলে পরিচিত ছিল। ২০১০ সালের ২০ জুলাই কর্মকর্তাসহ তিনজন পুলিশকে চরমপন্থীরা গুলি করে হত্যা করার পর পুলিশ সেখানে চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল। এতে ওই এলাকা চরমপন্থী থেকে মুক্ত হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় চরমপন্থীরা আবারও সংগঠিত হচ্ছে বলে পুলিশের কাছে খবর আসে। এরই মধ্যে গত ২১ জুন ঢালারচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাছ আলী ব্যাপারীকে (৭০) সর্বহারা দলের সদস্যরা ঢালারচর সীমান্তবর্তী রাখালগাছী নামক স্থানে কুপিয়ে হত্যা করেন। নিহত আক্কাছ আলী ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলীর অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন।