Tuesday, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
শিরোনাম
ডলি সায়ন্তনীকে নির্বাচনে চান পাবনার সংস্কৃতিকর্মীরাওনার্স পরিচয় দেন ডাক্তার, দিচ্ছেন সর্ব রোগের চিকিৎসাডলি সায়ন্তনীর প্রার্থীতা ফেরার অপেক্ষায় সুজানগর, আমিনপুরের মানুষঅবহেলা অব্যবস্থাপনায় অকার্যকর পাবনার সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, বিপাকে কৃষকসাঁথিয়ায় ভোটার হালনাগাদকারীদের পাওনা দিতে গরিমসি করছেন নির্বাচন অফিসারআটঘরিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা, স্বামী আটকসাঁথিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে মন্দির নির্মাণ করার চেষ্টা ॥ জনমনে অসন্তোষসাঁথিয়ায় চলাচলের রাস্তায় বেড়া,অবরুদ্ধ ১৬ পরিবারআটঘরিয়ায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধনবেড়ায় পাট ক্ষেত থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার

পেঁয়াজ চাষে এবার আগ্রহ কম বেড়া-সাঁথিয়ার চাষিদের

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

আরিফ খানঃ পাবনা বেড়া-সাঁথিয়ায় গত বছরগুলোর মত এবছর পেঁয়াজের আবাদে আগ্রহ কমেছে চাষিদের। পেঁয়াজের আবাদে গত দুই-তিন বছর ধরে লোকসান হওয়ায় পেঁয়াজের আবাদ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন অনেক কৃষক। এবার দানার (হালি পেঁয়াজ) আবাদ কমিয়ে দিয়ে মূলকাটা পেঁয়াজ ও অন্য ফসল আবাদ করছেন বেশিরভাগ কৃষক।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর (২০২২-২৩) ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরেও (২০২১-২২) একই পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এ উপজেলায় প্রতি বছরই পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্য ও অর্জন ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। অথচ এবারই প্রথম পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়নি। কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে তাঁরা জানতে পেরেছেন যে, গত বছর লোকসানের কারণে এবার পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ কিছুটা কম। এ কারণে পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা না বাড়িয়ে গত বছরের মতোই রাখা হয়েছে।
বেড়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দানার পেঁয়াজের (হালি পেঁয়াজ) লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৪০০ হেক্টর এ পর্যন্ত ৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে এবছর হালি পেঁয়াজের লক্ষমাত্রা কমে আসবে বলে জানা গেছে। গতবছর দানার পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল ৩৩৩০ হেক্টর জমিতে এবং মুল কাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল ১৮০০ হেক্টর জমিতে কিন্তু এবছর এবছর ২০৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
বেড়া উপজেলার পাঁচুরিয়া গ্রামের কৃষক রহিম আলী জানান, গত বছর আট বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করলেও এবার তিন বিঘা কমিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করছেন। একই গ্রামের মোতালেব মোল্লা তিন বিঘার জায়গায় এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করছেন। তাঁরা জানান, পেঁয়াজের আবাদ কমিয়ে সেই জমিতে এবার তাঁরা অন্য ফসল আবাদ করবেন।
সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া গ্রামের কৃষক মুন্নাফ সরদার জানান, গত বছর আমি নয় বিঘা জমিতে দানার পেঁযাজ লাগাইছিলাম। লাভতো হয়ই নাই দেড় দুই লাখ টাকা লোকশান গেছে। গত বছরের পেঁয়াজ আমার ঘরে এখনও রয়েই গেছে ২৫-৩০ মন। এখন সেই পেঁয়াজের বাজার এগারোশ থেকে বারোশত। তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় পেঁয়াজে ভালো লাভ হইত। অথচ দুই-তিন বছর ধইর‌্যা লাভ দূরের কথা লোকসান হয়। এবছর চার বিঘা জমিতে মূলকাটা পেঁয়াজ লাগাইছি আর পাঁচ বিঘা জমিতে দানার পেঁযাজ লাগাবো। এবারও যদি হালি পেঁয়াজে ধরা খাই তাহলে আর পেঁয়াজের আবাদ বাদ দিয়্যা সেই জমিতে খেসারি আর সরিষা লাগাবে।’
পেঁয়াজের ভাÐার বলে খ্যাত বেড়া-সাঁথিয়ার দুই উপজেলায় মুন্নাফ সরদার মতো অনেক কৃষকই এবার পেঁয়াজ আবাদে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ পুরোপুরি আবার কেউবা আংশিক পেঁয়াজের আবাদ বাদ রেখেছেন। এর ফলে গত বছরগুলোর তুলনায় এ উপজেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের মতো লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এবার পেঁয়াজের আবাদ দুই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমিতে কম হবে। কৃষকেরা গত বছরের লোকসানের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি। এ ছাড়া এবার সার, জ¦ালানি তেল (সেচের জন্য), বীজ, কামলা খরচসহ আবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ গত বছরের তুলনায় এবার বাড়বে। এর ফলে কোনো কোনো কৃষক গত বছরের মতো লোকসান হতে পারে ভেবে এবার পেঁয়াজ আবাদে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
পেঁয়াজচাষিরা জানান, পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে দুই পদ্ধতিতে। এর একটি হলো আগাম বা মূলকাটা এবং অপরটি হলো হালি। মূলকাটা পদ্ধতিতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের আবাদ করে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়। এই পদ্ধতিতে অঙ্কুরিত পেঁয়াজ জমিতে রোপণ করা হয়। মূলকাটা পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না।
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রির জন্য বিখ্যাত করমজা হাটে গিয়ে কথা হয় হাটের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের আড়তদার আব্দুল মুন্নাফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে আগাম জাতের পেঁয়াজ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। তাই এবার অনেক কৃষকই পেঁয়াজের (হালি) পরিবর্তে অন্য ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
অন্যদিকে হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করে মার্চ-এপ্রিলে পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের চারা জমিতে রোপণ করা হয়। হালি পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায়। উপজেলার বেশির ভাগ পেঁয়াজ আবাদ করা হয় এই (হালি) পদ্ধতিতে।
এদিকে উপজেলায় হালি পদ্ধতির পেঁয়াজের আবাদ যেমন শুরু হয়েছে তেমনি বাজারে আগাম (মূলকাটা) জাতের পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে। কিন্তু কৃষকের দাবি এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে তাঁদের উৎপাদন খরচ উঠছে না। আগাম পেঁয়াজের দাম ভালো না পাওয়ায় কৃষকেরা প্রধান অর্থাৎ হালি পদ্ধতির পেঁয়াজ আবাদ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।
সোমবার সাঁথিযা উপজেলার গজারিয়া বিল ও আফড়া গ্রামের ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকেরা কিছুটা সংশয় নিয়ে হালি পদ্ধতির পেঁয়াজের চারা বুনছেন। আগের বছরগুলোতে এই দুই এলাকার প্রায় পুরোটা জুড়েই পেঁয়াজের আবাদ হলেও এবার পেঁয়াজের আবাদ কিছুটা কমিয়ে এর পাশাপাশি কৃষকেরা অন্য ফসল আবাদ করছেন। বেশ কিছু জমি ফাঁকা পড়ে থাকতেও দেখা যায়। কৃষকেরা জানান, আরও দুই-চারদিন দেখে ফাঁকা রাখা জমিতে পেঁয়াজ বা অন্য ফসল লাগানোর ব্যাপারে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘গতবার কৃষকেরা পেঁয়াজে লোকসান দিয়েছেন। তাই এবার কোনো কোনো কৃষকের মধ্যে পেঁয়াজ আবাদের আগ্রহ কিছুটা কম। এর পরেও গত বছরের সম পরিমাণ জমিতে এবার পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবং আশা করি সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।’

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর