আরিফ খানঃ পাবনার বেড়া পৌর এলাকার মাসুদ রাণা একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছেন। যাতায়াতসহ সব মিলিয়ে মাসে ২৫ হাজার টাকার মতো বেতন পান। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার এলাকা মোটর সাইকেলে ঘুরে ওষুধ বিক্রির তদারকি করতে হয় বলে দুদিন আগে পর্যন্ত মাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা শুধু পেট্রোলের পেছনেই ব্যয় হতো। এতে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা টিকতো। কিন্তু পেট্রোলের দাম বাড়ার পর এখন পেট্রোল কিনতে প্রতি মাসে গড়ে তিন হাজার টাকা বেশি ব্যয় হবে। তার মানে এখন মোট বেতন থেকে তাঁর বাঁচবে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এই টাকাতেই চালাতে হবে তাঁর সংসার।
মাসুদ রাণা বলেন, ‘পেট্রোলের দাম বাড়ার আগেই সংসার চালাতে পারতাম না। নিত্যপণ্যের দামে যখন দিশেহারা অবস্থা, ঠিক সেই সময়ে মাথার ওপর তিন হাজার টাকার অতিরিক্ত বোঝা চাপল। ওষুধ কোম্পানি পেট্রোলের অতিরিক্ত খরচ বাবদ এক টাকাও দেবে না। এখন কীভাবে চলব, কোথায় যাব ভেবে অস্থির হয়ে পড়েছি।’
পেট্রোলের দাম বাড়ার পর মাসুদ রাণার মতো এমন অস্থির ও অসহায় হয়ে পড়েছেন পাবনার বেড়া উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন ওষুধ ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর শতাধিক বিক্রয় প্রতিনিধি। এসব প্রতিনিধিকে মোটর সাইকেলে চড়ে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় দোকানে দোকানে বা চিকিৎসকদের চেম্বারে ঘুরে ওষুধ ও অন্যান্য পণ্যগুলোর বেচাকেনা তদারকি করতে হয়। এভাবে প্রতিদিন তাঁদেরকে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার এলাকা মোটর সাইকেল চালাতে হয়। এতে প্রতিদিন মোটর সাইকেলে পেট্রোল লাগে দুই থেকে তিন লিটার। পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির আগে প্রতিদিন তাঁদের জ¦ালানি বাবদ প্রতিদিন খরচ হতো ১৭০ থেকে ২৬০ টাকা। এখন লিটারে ৪৪ টাকা দাম বাড়ায় এই বাবদ প্রতিদিন অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে ৯০ থেকে ১৩২ টাকা। অর্থাৎ মাসে গড়ে প্রায় তিন হাজার টাকা।
বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, এমনিতেই তাঁদের যে বেতন দেওয়া হয় তাতে ঠিকমতো সংসার চলে না। বেতনের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত বাবদ যে ভাতা বা মোটর সাইকেলের তেলের খরচ দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বরং মূল বেতনের টাকা থেকে এই খাতে প্রতি মাসে বেশ টাকা বেড়িয়ে যায়। ফলে এমনিতেই কষ্টে চলছিল তাঁদের সংসার। এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পেট্রোলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রয় প্রতিনিধিরা আরও বিপদে পড়ে গেলেন বলে তাঁরা জানান।
সরেজমিনে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সামনে গিয়ে ১০ থেকে ১২ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তাঁরা নিজেদের মধ্যে কষ্টের দিনলিপি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। পেট্রোলের দাম বাড়ায় আগামী দিনগুলো কিভাবে চলবে তা নিয়ে প্রত্যেকেই ছিলেন চরম চিন্তিত। পেট্রোলের দাম বাড়লেও যাতায়াত বাবদ তাঁদের এক টাকাও বাড়ানো হবে না বলে কোম্পানি থেকে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
একটি ওষুধ কোম্পানির এলাকা ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘চাকুরির শর্ত অনুযায়ী পোশাকে আমাদের ফিটফাট হয়ে থাকতে হলেও অল্প বেতনে বেশির ভাগকেই আর্থিক কষ্টে চলতে হয়।’
আরেকটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি রাসেল আহমেদ বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এ সময় আমাদের বেতন কমপক্ষে সাত-আট হাজার টাকা বাড়ানো দরকার। অথচ পেট্রোলের কারণে আমাদের মাসিক আয় উল্টো তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা কমে গেল।’
বেড়া বাজারে কথা হয় আরএফএল কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে। তিনি জানান, কোম্পানি মোটর সাইকেল দিয়েছে। তবে বেতন থেকেই তিনি এর দাম শোধ করেছেন। সেই মোটর সাইকেলে চড়ে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার দোকানে দোকানে ঘুরে পণ্য বিক্রির তদারকি করেন তিনি। আগে যাতায়াত খরচ বাদ দিয়ে বেতনের ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা টিকতো। কিন্তু পেট্রোলের দাম বাড়ায় এখন ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা টিকবে কিনা সন্দেহ।