আরিফ খাঁন : পাবনার বেড়া উপজেলাধীন পুরান মাশুমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মো. আব্দুর রাজ্জাকের পদোন্নতি প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ এনে তার পদোন্নতি বাতিল ও স্বপদে ফেরত পাঠানোর জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত ৮ শিক্ষক।
মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তিনি অন্য শিক্ষকদের বঞ্চিত করে এই অনৈতিক কাজটি করেছেন বলে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই শিক্ষক ২০০৩ সালে আইডিএ সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ৬০ নং পুরান মাশুমদিয়া কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছিলেন। ২০০৫ সালে আত্মীকরনের মাধ্যমে তিনি রাজস্বভূক্ত হন এবং বকেয়া বেতন ভাতাদি গ্রহণ করেন। এ পদে বহাল থাকাকালে তিনি রাজস্ব খাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে উপজেলার রূপগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং প্রকল্প থেকে ইস্তফা দেন। এ পদে যোগদান করলেও সে সংক্রান্ত কোন তথ্যাদি তার সার্ভিস বহিতে লিপিবন্ধ করেন নাই। অথচ বেড়া উপজেলার শিক্ষা অফিস তাকে প্রকল্পের চাকরীকাল গণনা করে বকেয়া বেতন ভাতাদি প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) পদে তার নাম পদোন্নতির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে পদোন্নতি প্রদান করেন। বর্তমানে তিনি রাজস্ব নাকি প্রকল্পভূক্ত শিক্ষক তা কারোই বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলার বেশ কয়েকজন শিক্ষক ইতোপূর্বে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে অভিযোগের বিষয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম সরেজমিনে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন অফিসে দাখিল করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন।
ওই প্রতিবেদন ও নোটিশের একটি ফটোকপি এ প্রতিনিধির হাতে এসেছে, যেখানে লেখা আছে- সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের বিধি ২ শাখা হতে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন- (এসআরও নং- ১০৮-আইন/২০১১/ ০৫.১৭১.০২২.০১.০০,০১০,২০১০ তারিখ : ০৩/০৫/২০১১ ) গ্রেডেশন নীতিমালা লংঘন করে আপনার দপ্তরের সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকার ৪৩ , ৪৪ , ৪৫ , ৪৬ , ৪৭ , ৪৮ , ও ৪৯ ক্রমিকে বর্ণিত ০৭ ( সাত ) জন সহকারী শিক্ষককে জৈষ্ঠ্যতা নির্ধারণ করে পদোন্নতির তালিকা তৈরীপূর্বক পদোন্নতি প্রদান করা হয়। নীতিমালা লংঘন করে জৈষ্ঠ্যতা নির্ধারণ করার কারণ ব্যাখ্যাসহ আগামী ০৩ ( তিন ) কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দাখিল করার জন্য এবং এ বিষয়ে জানার পর কী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, তা অত্র দপ্তরে জানানোর জন্য বলা হলো।
বেড়া উপজেলা প্রাথমিকের সাবেক কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি এ বিষয়ে কোন সুরাহা না করেই বদলী হয়ে যান এবং পরবর্তীতে আব্দুস সালাম শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এবং তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে যান। সেই সমময় আব্দুস সালাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্লীপ বরাদ্দের অর্থের দুর্নীতি নিয়ে এ প্রতিবেদকের একটি সংবাদ প্রকাশের পর স্ট্যান্ড রিলিজ হন। এরপরে বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন কফিল উদ্দিন। প্রাথমিকের ভুক্তভোগী শিক্ষকরা গত প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে পূর্বের সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ শিক্ষা অফিসে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করলেও বর্তমান কর্মকর্তাও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। তিনিও অর্থের কাছে বিক্রি হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ বিষয়ে কোন সুরাহা করছেন না বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সদ্য অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক জানান, আমরা প্রথমিক শিক্ষা অফিসারে কাছে আমাদের অবসর পরবর্তি সুবিধাপত্র জমা দিতে গিয়ে মাথাপিছু ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়াও দুঃখের বিষয় হল উপজেলা শিক্ষা অফিসে কোন কাজের ক্ষেত্রে গেলে খারাপ ব্যবহার করে।
অভিযোগকারী শিক্ষকরা পাবনা নিউজকে জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান না করলে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করবো। প্রয়োজনে আদালতের দূরস্থ হবো।
এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি তিন চারদিন হল অভিযোগ পেয়েছি। এটা ২০১৮ সালের ঘটনা তদন্ত না করে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না। আব্দুর রাজ্জাকসহ বঞ্চিত সকল শিক্ষদের পদোন্নতির বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে তাদের কাগজপত্র চেয়েছি। তদন্ত করে আমি উর্ধতন কতৃপক্ষ বরাবর জানানো হবে। আর ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে জানান আমাদের অফিসে এরকম কোন কার্যক্রম হয় না।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. সবুর আলী বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তারপরও আমি যদি কোন অভিযোগ পাই তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।