আরিফ খানঃ পাবনা বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী নৌবন্দরে উন্মুক্তভাবে বিক্রি করা হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লা। এদিকে সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই মাথায় কয়লা বহন করায় স্বাস্থ্যঝুকিতে পড়ছেন শত শত শ্রমিকরা। এছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কয়লা রাখায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আশপাশের ফসলি জমি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএও)’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সতর্ক করার পরিপেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা মানছেন না কেউ। বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের নগরবাড়ী এলাকায় নগরবাড়ী নৌবন্দর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোহেল ট্রেডার্স, আমান ট্রেডার্স, নওয়াপাড়া ট্রেডার্সসহ সাতজন কয়লা ব্যবসায়ী রয়েছে নগড়বাড়ীতে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা এ কয়লা কার্গো জাহাজে করে নগরবাড়ী নৌবন্দরে এনে বিক্রি করছে তারা। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ভাটাতে ইট পুড়াতে এই কয়লা ব্যবহার করা হয়। প্রতিটন কয়লার মূল ৬ হাজার টাকা। এই কয়লা মাথায় করে বহন করে শত শত শ্রমিক। কয়লার গুড়ো শ্বাস-প্রশ্বাসে মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে তাদের ফুসফুসে। ফলে ক্যান্সারসহ যক্ষা রোগের ঝুঁকি বহন করছে বলে অভিমত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যশোরের নওয়াপাড়া গ্রুপ ইন্দোনেশিয়ার এ জাহাজে আমদানি করে প্রথমে নিয়ে আসেন চট্রগ্রাম বন্দরে। সেখান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে নগরবাড়ীতে উন্মুক্তভাবে বিক্রি করছে। লোড-আনলোডের সময় ছাড়াও স্তুপিকৃত কয়লার গুড়ো বাতাসে মিশ্রিত হয়ে পার্শ্ববর্তী ফসলী জমিতে পড়ছে, এতে ঐসব জমি ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তাছাড়াও রোদে তাপে কয়লার স্তুপে আগুন ধরতেও দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে একাধিক শ্রমিকদের সাথে কথা হলে তাঁরা বলেন, দিন শেষে যখন গোসল করতে যাই তখন দেহি নাকের ভেতর মুখের ভেতর খালি কয়লা। আগের চেয়ে খাওয়া দাওয়ার রুচি কমে গেছে। কয়লা শ্রমিকদের নানা রকম অসুখ বিশুক হয় জেনেও পেটের দায়ে এ পেশায় আছেন বলে তারা জানান। শ্রমিকরা প্রতিদিন ৪০০শত থেকে ৫০০শত টাকা মুজুরি পান।
মাস্ক ব্যবহারের ব্যপারে জানতে চাইলে রহিম নামের এক শ্রমিক জানান, কয়লার ঝুড়ি মাথায় নিলে প্রচুর গরম লাগে। ভিজে মাস্ক নষ্ট হয়ে যায়।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহমুদুল করিম রাজু প্রতিদিনের সংবাদের এ প্রতিবেদক কে জানান, ‘যারা কোন রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই কয়লা বহনের কাজ করে তাদের শ^াসকষ্ট,ক্ষুধামন্দা, ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টের পাশাপাশি কাশি শুরু হয়ে থাকে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেটা যক্ষার রুপ ধারন করে থাকে’।
নগরবাড়ীর ঘাট এলাকার কৃষক ইয়াসিন আলী জানান, ‘কয়লার গুরা ফসলি জমিতে পরে মাটি কালো হয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে আর কোন ফসলই ভালো হচ্ছে না। আর কিছুদিন গেলে এসব জমিতে ফসল আবাদের আশা ছেরে দেওয়া লাগবিনি’।
বেড়া উপজেলা ভারপাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম বলেন, ‘জমিতে কয়লার স্তর পড়লে ফসল কম হবে। কারণ মাটি ঠিকমত প্রাকৃতিক খাদ্য ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহন করতে অন্তরায় সৃষ্টি হবে। তবে কয়লা জাহাজ থেকে আনলোড হবার পর নিদিষ্ট স্থানে আবদ্ধ করে রেথে বিক্রি করলে সবার জন্যই উপকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ নিয়ে নিয়ম অনুয়ায়ী সংরক্ষিত এলাকায় এ ব্যবসা করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন’।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এ ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়ে আসছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
তবে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মন্তব্য জানতে চাইলে পড়তে হয় আরেক বিড়ম্বনায়। তারা একজন আরেক জনের কাছে ঠেলে দিয়ে বলেন, ওমুকের কাছে যান, তার কাছে সব পাবেন। নগরবাড়ীর অন্তত পাঁচ কয়লা ব্যবসায়ীর দপ্তর ঘুরে জানা যায়,তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ আছে। তবে সেটা তারা উপস্থাপন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শ্রমিকদের সবসময় মাস্ক নেবার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. সবুর আলী বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নগরবাড়ী ঘাট এলাকার কয়লা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। এবং টিন দিয়ে ঘেড়াও করে কয়লা বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি না করা ঢেকে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।