ফাতিহুল কাদির সম্রাট
করোনা ভাইরাসকে চীনের ল্যাবে তৈরি বায়োজিক্যাল মারণাস্ত্র বলে সন্দেহ অনেকের। এ অভিযোগে চীনের বিরুদ্ধে মামলা করারও প্রস্তুতি চলছে অনেক দেশে। মার্কিন একাধিক গবেষক বারবার চীনের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন। আমি প্রথমে এসব অভিযোগকে স্রেফ বৈশ্বিক রাজনীতির চাপাবাজি মনে করতাম। কিন্তু এখন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যে, বহু বছর আগে চীন এই মানববিধ্বংসী জীবাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। হতে পারে প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র চীনের সম্ভাব্য উন্নতিকে আঁচ করতে পেরে নিজেরা এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের চাষ শুরু করেছিল ল্যাবে। অন্তত পাঁচটি রহস্যোপন্যাসে এই ভাইরাস যে মনুষ্যসৃষ্ট, প্রাকৃতিক কোনো মুসিবত নয়, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে দুটি বই বেশি আরোচনায় এসেছে।
দুটির একটি বইয়ের নাম ‘ইন্ড অফ ডেজ’ (End of Days)। লিন্ডসে হ্যারিসনকে সাথে নিয়ে বইটি লিখেছেন সিলভিয়া ব্রাউনি। ২০০৮ সালে প্রায় চারশ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশিত হয় বার্কলে প্রকাশনা সংস্থা থেকে। এ বইয়ে অনেকগুলো বৈশ্বিক ঘটনার আগাম বার্তা বা পূর্বাভাস দেওয়া আছে। এই বইয়ের ৩১২ নম্বর পৃষ্ঠায় চোখ বুলালে আমাদের বিস্মিত হতে হয়। লেখা আছে “ In around 2020 a severe pneumonia-like illness will spread throughout the globe, attacking the lungs and the bronchial tubes and resisting the all known treatments. ……it will suddenly vanish as quickly as arrived, attack again ten years later, and then disappear completely.” অর্থাৎ “২০২০ সালের দিকে সারা দুনিয়ায় নিউমোনিয়া ধরনের মারাত্মক এক অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়বে যা মানুষের আয়ত্তে থাকা সকল চিকিৎসাকে হঠিয়ে ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে আক্রমণ করবে। …..এটা যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে সেভাবেই দ্রুত চলে যাবে। দশ বছর পরে আবার ফিরে আসবে এবং এরপর চিরতরে এটি বিলীন হয়ে যাবে।” করোনার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে না?
এটাতো ২০০৮ সালের বই। এর অনেক আগের আরেকটি বইতে আরো কিছু চমকপ্রদ আগাম বার্তা দেওয়া আছে। এমনকি চীনের উহান শহরের নামটিও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে তাতে। ডিন কুন্টজ (Dean Koontz) নামের একজন থ্রিলার লেখকের বইটির নাম “দ্যা আইজ অব ডার্কনেস” (The Eyes of Darkness)। ১৯৮১ সালে বইটি প্রকাশ করে পকেট বুকস ইনক., পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩১২। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে লেখা এই বইতে লেখক চীনের উদ্ভাবিত বায়োউইপন (Bio weapon) বা জৈব মারণাস্ত্রের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। সেই অস্ত্রের নাম উহান-৪০০ (Wuhan-400) । বইয়ের এক জায়গায় লেখা আছে “they call the stuff `Wuhan-400’ because it was developed at their RDNA lab outside the city of Wuhan, and it was the four hundredth viable strain of man made microorganism created at that research center.” অর্থাৎ তারা (চাইনিজরা) এর নাম দিয়েছে উহান-৪০০ কারণ এটি উহান শহরের বাইরের আরডিএনএ ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে তাদের গবেষণা কেন্দ্রে মনুষ্যসৃষ্ট চারশ মাইক্রোঅর্গানিজমের ক্ষমতা আছে।” কী বিস্ময়কর সাদৃশ্য! উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস যে এর মধ্যে প্রায় চারশ বার তার বৈশিষ্ট্য বদলে ফেলেছে তাতো সবার জানা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।
অনেকে ধারণা করছেন চীন অনেক আগে থেকে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর কিছু গোপন সংবাদ থ্রিলার লেখকদের কাছেও পৌঁছেছিল। তা না হলে এত নিখুঁতভাবে মিল পাওয়া যাচ্ছে কীভাবে? কিন্তু আজ থেকে বছর ত্রিশেক আগেও চীন ছিল নিতান্ত গরিব দেশ। তখন বিশ্বের মোড়লগিরিতে চীন যে মার্কিন প্রতিপক্ষ হতে যাচ্ছে তার লক্ষণ ফুটে উঠতে শুরু করছে মাত্র। চীনকে টার্গেট করে যুক্তরাষ্টই জীবাণুযুদ্ধের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল এমনটাও অসম্ভব নয়। অনেককিছুই হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু একথাটি চরম সত্য যে, করোনার আক্রমণে যে বিশ্বের হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণ গেল তারা কিন্তু আর কোনোদিন স্বজনদের কাছে ফিরে আসবে না।
সিলভিয়া ব্রাউনির ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে করোনা বছর দশেক পর আবার আসবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে আজকের জন্যে শুধু নয়, আগামীর জন্যেও দুশ্চিন্তা তোলা রইল।