ফারুক হোসেনঃ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে হাইকোর্টের রায় অমান্য করে মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করে সেবার নামে অবৈধভাবে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে আলট্রা মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার আব্দুস সালাম।
২০২৪ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারী মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না বলে রায় দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। আর এই রায়ের পর থেকেই দেশের সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আর এই সুযোগেই কাশিনাথপুরে হাইকোর্টের রায় অমান্য করে মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করে সেবার নামে অবৈধভাবে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে আলট্রা মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার আব্দুস সালাম।
ভুক্তভোগী এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গর্ভবর্তীদের আল্ট্রাসনোগ্রাম করে সালাম ডাক্তার নিজের ইচ্ছাতেই বলে দেন ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। এখানেই সমস্যা, যাদের ছেলে অথবা মেয়ের চাহিদা আলট্রা করে তার উল্টো ধরা পরলেই তারা বেশির ভাগই গর্ভপাত করে বাচ্চা নষ্টের সিদ্ধান্ত নেয়।গর্ভবতী মহিলা বাচ্চা নষ্ট না করতে চাইলে মারপিটসহ বিবাহবিচ্ছেদের মতোও ঘটনা ঘটতেছে ডাক্তার আব্দুস সালামের মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করার জন্য। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এই ডাক্তারের বিচার চাই।
গর্ভবতী এক মহিলা বলেন, ৩ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিঃ আলট্রা মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার আব্দুস সালামকে দিয়ে আলট্রা করলাম। আমি এবং আমার সাথে থাকা আত্মীয় কি বাচ্চা হবে জানতে চাওয়ার আগেই ডাক্তার সাহেব উপর দিয়েই বলে দিলো আপনার মেয়ে হবে।
২৫ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না বলে রায় দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যাতে গর্ভাবস্থায় শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শনাক্তকরণকে নিরুৎসাহিত করে এবং গাইডলাইন কঠোরভাবে অনুসরণ করে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।
ডাক্তার আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোন কাগজপত্র আসেনি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পত্রপত্রিকায় জানতে পারছি। তবে এরকম কোন ঘটনা ঘটে নাই।আমরা ছেলে মেয়ে কি হবে মুখেও বলিনা এবং লিখিতও দেইনা কোন সময়ই। মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশের রেকর্ড আছে সাংবাদিকদের কাছে ডাক্তার আব্দুস সালামকে জানালে তিনি বলেন,আপনি আমার ভাই,এখন আপনি যদি জানতে চান ছেলে নাকি মেয়ে হবে তখন তো বলতেই হয়।
এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সুজয় কুমার সাহা বলেন, হাইকোর্টের রায় অমান্য করে মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করলে এটা দন্ড পাওয়ার যোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল বাতেন বলেন,মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় বলার কথা না। আমি নতুন আসছি। ওনার সাথে কথা বলে দেখবো।
আদালতের এই রায়কে যুগান্তকারী বলছেন এর রিট আবেদনকারী আইনজীবি ইশরাত হাসান। “এই রায়ের পর এখন আর দেশের কোন হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ল্যাবরেটরি কোনভাবেই অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না, অর্থাৎ সন্তানটি ছেলে না মেয়ে তা আর আগে থেকে জানার সুযোগ নেই,” বলেন তিনি।
এ রায় অমান্য করলে আদালত অবমাননার শাস্তি হবে বলে জানান ইশরাত হাসান। আর যে কেউ চাইলে এ রায় ধরে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারবে বলে জানান তিনি।
২৫ শে ফেব্রুয়ারী হাইকোর্টের রায়ের পরেও মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় যে নিয়মিতই প্রকাশ করে আলট্রা মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার আব্দুস সালাম তার রেকর্ড সাংবাদিকদের হাতে সংরক্ষিত আছে।