Friday, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
শিরোনাম
ডলি সায়ন্তনীর প্রার্থীতা ফেরার অপেক্ষায় সুজানগর, আমিনপুরের মানুষঅবহেলা অব্যবস্থাপনায় অকার্যকর পাবনার সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, বিপাকে কৃষকসাঁথিয়ায় ভোটার হালনাগাদকারীদের পাওনা দিতে গরিমসি করছেন নির্বাচন অফিসারআটঘরিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা, স্বামী আটকসাঁথিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে মন্দির নির্মাণ করার চেষ্টা ॥ জনমনে অসন্তোষসাঁথিয়ায় চলাচলের রাস্তায় বেড়া,অবরুদ্ধ ১৬ পরিবারআটঘরিয়ায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধনবেড়ায় পাট ক্ষেত থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধারবেড়ায় বালুবাহী ড্রাম ট্রাক চাপায় ঠিকাদার নিহতমহাসড়কের দুপাশের গাছ চালক-যাত্রীদের আতঙ্ক

জুয়েল আইচ : জন্মদিনের শুভেচ্ছাঞ্জলি

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

আবদুল্লাহ আল মোহন


১.
আমাদের প্রাণের মানুষ, প্রিয় মানুষ, অনন্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ (Jewel Aich), আজ তাঁর জন্মদিন। অতি আপনজন, প্রিয়জনের জন্য নাকি কোন বিশেষণ ব্যবহার প্রয়োজন হয় না, তাই কোন প্রকার বিশেষণ ব্যবহার না করেই জানাই, শুভ জন্মদিন ‘ভাইয়া’। আমার কাছে ১০ এপ্রিল মানেই জুয়েল আইচ। আলোকিত এই শিল্প সাধক এদিনেই প্রথম আলো দেখেছিলেন ধরণীতে। জীবন জয়ের এই জাদুশিল্পীর ‘অন্তরালের আমি’র একজন অভাজনের ভাষায়, ‘জন্মদিনে বাংলাদেশের জাতীয় বংশীবাদককে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা নিরন্তর।’ বিশ্ববরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের সাথে তাঁর জাদুদলে কাজ করার সুযোগে, অভিজ্ঞতায় অসম্ভব পরিশ্রমী তাঁকে একান্তভাবে দেখার কারণে মনে হয়েছে তিনিই আমাদের একালের ‘একলব্য’। অসাধারণ সাধনায় নিমগ্ন থেকে আপন স্বপ্নকে ছুঁয়েছেন, স্বপ্নের সমান হয়েছেন, আরো অনেকের স্বপ্নকে জাগ্রত করেছেন সাফল্যের সাথে। ফলে আমার কাছে তিনি একালের ‘একলব্য’ না হলে আর কে হবেন ? সমকালের শিল্প জগতে কোথাও আর কেউ কী আছেন তাঁর আশেপাশে? আমি তো খুঁজে পাই না, পাইনি। তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ, যার নিত্য সহযোগিতা ছাড়া আমি আজকের জাদুশিল্পী জুয়েল আইচকে ভাবতেও পারি না, তিনি বিপাশা আইচ, আমার ‘ভাবি’। জুয়েল আইচকে মঞ্চে এবং ঘরে-বাইরে সর্বত্রই বিপাশা ভাবি যে ইতিবাচক সহযোগিতা প্রদান করছেন নিরলসভাবে নিরন্তর, তার তুলনা আমি খোঁজারই চেষ্টা করি না, ভুল হবে বলে। আর তাঁদের অনন্ত জীবনানন্দ সেতু হিসেবে একমাত্র সন্তান খেয়া’র ভূমিকার কথাও উল্লেখ না করা অবিচার হবে। এমন আলোকিত স্বজনদের অবিরল প্রীতি নিয়েই তো সম্পূর্ণ মানুষ, আমাদের অহংকার, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আমার নানা স্বপ্নবীজ বপনের ‘পাগলামীর’, জীবন জয়ের সদা উজ্জীবক ‘ভাইয়া’।
২.
জনারণ্যে তিনি জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ নামে সুখ্যাত, সুপরিচিত হলেও আমার কাছে তিনি কেবলই ‘ভাইয়া’। আর তাঁর কাছে আমি চিরদিনের- ‘শিশু’। কতদিন যে মধুর সুরে-স্বরে ‘শিশু’ বিশেষণ শুনে মুগ্ধ হয়েছি, তার শিহরণ অনুভূতি প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। আজ জন্মদিনে তাঁর সাথে অনেক স্মৃতি, অনেক কথাই আজ মনে পড়ছে। যেমন তিনি নিজে বিশ্বাস করেন, বলে থাকেন, ‘মানুষ তার ইচ্ছের সমান সুন্দর’।তাঁর কাছে তাই সুন্দর এসে ফিরে যায় না, শিল্পের কাঠামোয় প্রাণ পায়, কাছে আপনজন হয়ে থেকে যায়। দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কারণে এবং তাঁর জাদুদলের সাথে কাজ করার সুবাদে অসম্ভব কর্মঠ মানুষ ‘অন্তরালের আমি’র জুয়েল আইচকে দেখে, মিশে তাঁকে সমীহ না করে উপায় থাকে না। জুয়েল আইচকে দেশের সবাই একনামে চেনেন জাদুশিল্পী হিসেবে, কথার জাদুর গুণেও। কিন্তু আমার কাছে তিনি আরো অনেক কিছুর সুসমন্বয়ের ঋদ্ধ একজন পূর্ণ মানুষ। সুনির্বাচিত গ্রন্থ পাঠ, নিয়মিত লেখাপড়ার কারণে ভাবনার গভীরতা, নিরন্তর উচ্চায়ত জ্ঞান চর্চা, অসম্ভব বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রবল যুক্তিবাদ ও মানবিকতার মতো নানা গুণের সমাহারই জুয়েল আইচ। সক্রেটিস কথিত ‘দার্শনিক রাজা’র স্থলে তিনি আমার কাছে অতি চেনা একজন ‘দার্শনিক শিল্পী’।আমার মতোন যারা জুয়েল আইচকে চেনেন, জানেন তাঁরা নিশ্চয় আমার এই মন্তব্যকে মোটেই ‘স্বজনপ্রীতি’ বলে সমালোচনা করবেন না। প্রিয় মানুষ, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, যিনি বিনোদন থেকে জাদুকে শিল্পের মর্যাদায় উন্নীত করে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে সুপরিচিত ও সম্মানিত করেছেন। তিনি কেবল জাদুশিল্পী বা বাঁশিবাদকই নন, একাধারে চিত্রশিল্পী-সমাজসেবী এবং একাত্তরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও।
৩.
এ কথা বললে বাড়তি বলা হবে না যে, রবি ঠাকুরের জনপ্রিয় এই গানটি যেন জুয়েল আইচের কথা স্মরণ করেই অগ্রিম রচিত, ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে/এ জীবন পূণ্য করো দহন-দানে।।/ আমার এই দেহখানি তুলে ধরো, / তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো / নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে।।/ আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব/ সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।/ নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,/যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো/ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে উর্ধ্ব-পানে।।’ রবি ঠাকুরের এই গানটি আমার অনেক পছন্দের কারণ গানটি নিজেকে বদলানোর প্রত্যাশা জাগায়। যেমনটি আপন জীবনের ক্ষেত্রেই অসম্ভব আশাবাদের শক্তিতে, প্রবল আস্থায়, অবিচল বিশ্বাসের ভূমিতে স্বপ্নগুলোর অঙ্কুরকে মহিরুহতে পরিণত করে প্রমাণ করেছেন বলেছেন, ‘ভালোবাসা থাকলে কোনকিছুই অসম্ভব নয়’ কিংবা ‘ভালোবাসা ছাড়া কোনকিছুই সম্ভব নয়।’। সেই সফল মানুষটিই জুয়েল আইচ। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি শিক্ষকতার মহান পেশা থেকে মননশীল শিল্প সাধনায় নিমগ্ন থেকে আলোর পথযাত্রায় আপন লক্ষে পৌঁছাতে পেরেছেন, চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করে আমাদের সামনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার গৌরবোজ্জ্বল প্রতিনিধি হয়ে উড়িয়েছেন বিজয়ীর হাসিতে।
৪.
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বঙালি জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, তাঁর জুয়েল বাঁশি, মোহন হাসি, চিহৃ থেকে সচিত্রকরণ, উপস্থিত দর্শকের মনের গোপন ভাবটি সঠিকভাবে প্রকাশ, শিল্পবাক্য বিনির্মাণ সুষম বিন্যাসে উপস্থাপিত হয় মঞ্চে। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সরল জীবন যাপন করেন, মনের সরল আনন্দের বহি:প্রকাশ ঘটে তাঁর হাসিতে, বাঁশিতে, সুরের মায়াজালে মোহাচ্ছন্ হন দর্শক। অন্তর থেকেই অকৃত্রিম হাসি উপহার দিতে জানেন বলেই তাঁর মোহন হাসি কেবল নারী নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই বিমোহিত করে। ব্যক্তিগত জীবনে দেখেছি তিনি যেমন সুবচনে রসিকজন, তেমনি জীবনাদর্শে অসম্ভব সাহসী মানুষ, স্বাপ্নিক সংগ্রামী, সংশপ্তক। মানুষের জীবন সুন্দর, সুখের, শান্তিময় হওয়া বিষয়ে হেসে জুয়েল আইচ সংক্ষেপে জানান দেন জীবনের মূলসূত্রটি, ‘আমার চাওয়াটাকে সীমিত করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত ব্যায়াম করতে হবে। মানুষের জন্য ভাবতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে।’
৫.
জুয়েল আইচের দিকে তাকালে তাঁরই একটি কথা আমার প্রাণে প্রতিনিয়ত ধ্বণিত হয়, ‘হাসির চাইতে বড় কোন মায়াবী বাঁশি নাই।’ সত্যিই তাই, কবি মনমোহন দাস বাড়িয়ে বলেন না মোটেই, ‘জুয়েল আইচের হাসি / সুরের জুয়েল বাঁশি’।কারণ জাদুর ন্যায় জুয়েল আইচের মোহন বাঁশির সুরও ভীষণই মধুর, কেবল রাধা রূপী বিপাশা আইচকেই নয়, আমাদের সকলকেই মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, বুকের মাঝে কেবলি বাজে। উল্লেখ্য যে, জুয়েল আইচের আবিস্কৃত বাঁশির নাম পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া দিয়েছিলেন ‘জুয়েল বাঁশি’। জুয়েল আইচের মুখে সবসময় থাকে চির চেনা মোহন হাসি। জুয়েল আইচ শুধু একজন জাদুশিল্পীই নয়, তিনি একজন ধ্রুপদী বাঁশিবাদক হিসেবেও সুধি মহলে স্বীকৃত। জুয়েল আইচের বাঁশির সুরে তাই কেবল তাঁর স্ত্রী বিপাশা আইচ, আমার প্রিয় বিপাশা ভাবিই নন, আমরাও বাঁশির সে সুরে তন্ময় হয়ে পড়ি। তাই তাঁর আশ্চর্য বাঁশির সুরে ধীরে ধীরে শুন্যে ভাসতে দ্বিধা করেন না বিপাশা ভাবি। শুধু কী তাই ! গিলোটিনের ভেতর ঘাড় পেতে দিতেও নির্ভয় থাকেন বিপাশা আইচ।
৬.
আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি, সত্যিকারের বড় মানুষদের মনটাও অনেক বড় হয়। কথাটির প্রমাণ পেয়েছি তাঁর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখার সুবাদে।ছোট মন নিয়ে যে বড় কাজ করা যায় না, বড় মানুষও হওয়া যায় না, তারই আলোকিত উদাহরণের নাম তাই জুয়েল আইচ।তিনি প্রচলিত ঘরানার জাদুকরের বৃত্তের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে স্বত:প্রণোদিত হয়ে প্রতিনিয়ত শিল্পের নানান ধারার পাঠ, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তৈরি করেছেন নিজেকে। প্রকৃত শিল্প যে আসলে আসে মূলত ভালোবাসা থেকেই। সমস্ত শিল্পের মূলেই যে ভালোবাসা, সেই আলোর বিচ্ছুরণ ঘটতে দেখা পাই তাঁর সাথে কথোপকথনে। তিনি কঠিন কথাটিও সহজভাবে বলতে মোটেই সংশয়ী নন আবার অন্যের যেন অসম্মান না হয় সে দিকেও তিনি দারুণ সচেতন। ফলে জুয়েল আইচকে কেবল মুখোমুখিই নয়, নানা আয়োজনে, অনুষ্ঠানে বার বার দেখি আর মুগ্ধ হয়ে শুনি। যেমনটি হয় আরেক পরম প্রিয়জন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ক্ষেত্রেও। কৃতজ্ঞতার সাথে আবারো স্বীকার করি, সায়ীদ স্যারের কারণেই আমার জুয়েল আইচের সাথে কাজ করার দূর্লভ সুযোগ হয়।
৭.
নিজে একজন শিক্ষক হিসেবে সুযোগ পেলেই আমার অসীম সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায়ই বলি, যারা সুন্দর মানুষ হতে চাও, সুন্দর করে কথা বলতে চাও, সাবলীল ভাবে, হাসিমুখে নিজস্ব ভাব-ভাবনাগুলো মিষ্টি ভাষায় প্রকাশ করতে চাও তারা জুয়েল আইচকে এবং সায়ীদ স্যারকে মনোযোগ দিয়ে ‘পাঠ’ করো। আরেক প্রিয় মানুষ সুশিক্ষক সরদার ফজলুল করিম স্যার যেমন বলতেন, প্রতিটি মানুষই একেকটি গ্রন্থ, তাকে পাঠ করতেও শিখতে হয়। আসলেই তাই, বই পাঠের সাথে সাথে জীবিত আলোকিত মানুষদেরও পাঠ করার প্রতি মনোযোগ জরুরি বলেই আমি বিশ্বাস করি।ফলে জীবনের সাথে জীবন যোগ করার প্রক্রিয়া সহজ হয়, জীবনটা কেবল একটা লোভ কিংবা ভুলের ফুলের কাছে জিম্মি না থেকে অসংখ্য বিকশিত সুগন্ধি ফুলের সমাহারের বাগানের অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। জুয়েল আইচকে এবং সায়ীদ স্যারদের মতোন মানুষদের কাছে তাই আমাদের অনেক শেখার আছে, তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু নেওয়ার আছে। কেবল সেই ইতিবাচক মনটা চাই, আর চাই প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা, উদ্যোগটা।
৮.
আমরা জানি, জাদু (magic) একটি পারফরমিং আর্ট বা পরিবেশনমূলক শিল্প। একাধিক শিল্প মাধ্যমের সমন্বিত শিল্প হিসেবেও জাদু তাই বহুমাত্রিকতার বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মঞ্চে জুয়েল আইচের কথা বলা তথা নান্দনিক উপস্থাপনা, প্রাণ হরণ করা বাঁশি বাদন, নানা প্রকার অভিব্যক্তি প্রকাশ, সুর ও আলোর যথাযথ মাত্রায় ব্যবহারসহ বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমের সুষম বিন্যাসেই জাদু প্রকৃত শিল্প হয়ে ওঠে।ফলে প্রতিনিয়তই উপস্থিত দর্শকগণ বিমুগ্ধ না হয়ে পারেন না। আর এ কারণেই শিল্পী হিসেবে জুয়েল আইচ অনন্য, বিশ্বজুড়ে জীবন্ত কিংবদন্তি।তিনি বাঙালির, বাংলাদেশের গর্ব। যে লাল-সবুজ পতাকা তিনি তাঁর প্রতিটি শোতে উপস্থাপন করেন মর্যাদার সাথে, সেই পতাকার জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে জীবন বাজি রেখেছেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, সেই তিনিই জাতীয় পতাকার সম্মান বজায় রাখতে জাদুশিল্পকে বিশ্ব দরবারে আপন দক্ষতায় তুলে ধরছেন সব সময়। বিখ্যাত কথাশিল্পী এরিখ মারিয়া রেমার্কের ‘অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’উপন্যাসের সেই সংশপ্তক যোদ্ধার মতোন তিনিও নিরন্তর দেশের পতাকাকে মাথার উপরে তুলে ধরে শিল্পের জগতে পথ হাঁটছেন, দেশ মায়ের সম্মান বৃদ্ধিতে তীব্র সচেতনতার সাথেই।
৯.
শিল্পের কি কোনও সীমা আছে? কোনও মানচিত্র দিয়ে কি বাঁধা যায় শিল্পকলাকে? না, যায় না বলেই দেশ-কাল-মাধ্যম ভেদ জয় করে শিল্প কথা বলে তার নিজের ভাষায়। আর তাই তো তিনি মঞ্চ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন তাঁর জাদু শিল্প চিত্রমালা। আমার কাছে তাই জাদু শিল্প আর জুয়েল আইচ সমার্থক হয়ে আছে। বাংলার চিরায়ত লৌকিক ঐতিহ্য জাদুকে বিশ্ব দরবারে শিল্পের সুষম আলোয় বিকশিত, প্রকাশিত করেছেন যিনি, তিনিই জুয়েল আইচ। জাদু তাঁর অস্তিত্বের ভেতর থেকে উঠে আসা স্বপ্নের সম্প্রসারণ, দৃশ্যমান জগত। তাঁর প্রবল আশাবাদের আনন্দময় উপস্থাপন, মানবিকতার ইতিবাচক অনুভবের অন্তরালের মেঘ-বৃষ্টি-রঙধনু-ঝড়-বসন্ত-শীতের সমন্বিত শৈল্পিক প্রকাশ। জাদু তাঁর ভালোবাসার আলো, বিজ্ঞানও প্রযুক্তি নির্ভর যুক্তিবাদের কৌশলী অঞ্জলি অর্পণ।জাদুর মাধ্যমে তিনি বিনোদন দান করেন, মনের খিদে মেটান বটে, সেই সাথে মানবিক একটি পৃথিবী গড়ার অসীম স্বপ্নও জাগ্রত করেন সকলের মাঝে। তিনি সংস্কৃতি সাধক, ধারকও ব্যক্তিগত জীবনে। শুদ্ধ জীবন যাপনই আসল সংস্কৃতি বলে মনে করেন, সুস্থ চেতনাকে ধারণ স্বপ্নসন্ধানী আদ্যন্ত বাঙালি এই শিল্পী বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব, কোনকিছুই অসম্ভব নয়। মৌলিক বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কাজ করতে তিনি খুব একটা পছন্দ করেন না বলেই জানি।
১০.
কবি শামসুর রাহমান জুয়েল আইচকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আরো অনেক স্বনামখ্যাত, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বও তাঁকে নিয়ে লিখেছেন, বলেছেন। এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ছে এ সময়ের একজন খ্যাতিমান লেখক, সাংবাদিক আনিসুল হকের একটি লেখায় জুয়েল ভাইয়াকে নিয়ে বলা তাঁর কয়েকটি কথা। আনিসুল হক দৈনিক প্রথম আলোতে ‘জয়তু জুয়েল আইচ’ শিরোনামে সে লেখায় অকপটে বলেছেন, ‘জুয়েল আইচ নিপাট ভদ্রলোক, অনেক গুণে গুণান্বিত মানুষ, ভালো ছবি আঁকেন, বাঁশি বাজান, পড়াশোনার পরিধি বিস্তৃত এবং নিজের কাজটা করেন সবচেয়ে ভালোভাবে, অসাধারণ এক ম্যাজিশিয়ান তিনি। আমাদের সবার মনে আছে, একবার আনন্দ মেলা উপস্থাপন করেছিলেন বিটিভিতে, কী ভালোই না হয়েছিল!’ আবার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক রাজু আলাউদ্দিন তাঁকে নিয়ে যথার্থই লিখেছেন, ‘সবাই তাকে যাদুকর হিসেবে চেনেন, কিন্তু আমি তাকে যাদুকরের অধিক বলে বিশ্বাস করি। তিনি শুধুই যাদুকর নন, তিনি যাদুশিল্পী। সত্যিকারের এক যাদুশিল্পী। তিনি যদি শুধুই বক্তা হতে চাইতেন, সেখানেও তার যাদুকরী শক্তির বিচ্ছুরণ যে কাউকে অভিভূত করতো। তিনি যদি কেবল উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিল্পী হিসেবে পরিচিত হতে চাইতেন, তবে সেই পরিচয়টিও তাকে শিখরে নিয়ে যেত। তিনি যদি কেবলই লেখক হতে চাইতেন, তাহলেও তিনি লেখালেখির জগতে সর্বোচ্চ জায়গাটিতেই অবস্থান করতেন। কিন্তু তিনি বিচ্ছিন্নভাবে এর কোনোটাই হতে চাননি, তিনি হয়েছেন এই সবকিছুর এক সমন্বিত রূপ যা তাকে যাদুশিল্পের জগতে অনন্য ও বিরল ব্যক্তিত্ব করে তুলেছে।’
১১.
জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ ১৯৫২ সালে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সমুদয়কাঠী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিজয় কুমার আইচ, মা সরযু আইচের নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। শিক্ষা সনদ অনুযায়ী জুয়েল আইচের পুরো নাম গৌরঙ্গলাল আইচ। পিতার ব্যবসার কারণে তাঁর ছোটবেলা কেটেছে পিরোজপুর শহরে। শৈশবে তিনি পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। সেখানকার সরকারি হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি. এবং পিরোজপুর কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এছাড়াও শিক্ষকতার সুবাদে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট থেকে বি.এড. কোর্স সমাপ্ত করেন এবং তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেন। তিনি শৈশব থেকেই জাদু চর্চা করতেন। ছোটবেলায় বেদেদের কাছে যাদু দেখে তিনি যাদু শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় যাদু দেখে তাঁর এ বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয় এবং নিজেও যাদুর চর্চা শুরু করেন। তিনি মঞ্চে প্রথম যাদু দেখান ১৯৭২ সালে। বিটিভিতে তাঁর যাদু প্রথম প্রচারিত হয় ১৯৭৮ সালে। এক্ষেত্রে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের অকৃত্রিম সহযোগিতার কথা তিনি সবসময়ই অকপটে স্বীকার করে নিজের বিনয়কেই প্রকাশ করেন।
১২.
জুয়েল আইচের ছোটবেলার কথা তাঁর ভাষ্যেই শোনা যাক, ‘অনেক কিছুই তো হতে চেয়েছি ছোটবেলায়। ছোটবেলা থেকেই আমার ঝোঁক তৈরি হয় ছবি আঁকার প্রতি। আমার বাবার শখ ছিল ছবি আঁকা। তার দেখাদেখি আমিও ছবি আঁকা শুরু করি। ছবি আঁকার সেই অভ্যাস এখনো আছে। গ্রামের মেলায় একবার দেখলাম এক বাঁশিওয়ালাকে, বাঁশি বাজিয়ে বাজিয়ে বাঁশি বিক্রি করছে। আমারও ইচ্ছে হলো বাঁশিওয়ালা হওয়ার। শুরু হলো আমার বাঁশি বাজানোর কসরত। একবার আমাদের গ্রামে বেদেবহর এসেছিল। বেদে দলের কাছ থেকেই আমি প্রথম জাদু দেখি। ঠিক কী জাদু দেখেছিলাম মনে নেই, তবে চমৎকৃত হয়েছিলাম এটা বলতে পারি। জাদুর প্রতি আকর্ষণটা তৈরি হয় আরো অনেক পরে। বানারীপাড়া সার্কাস দলের এক জাদুকরের জাদু দেখে তো হতবাক আমি। সেই জাদুকর একটা ছেলের গলা কেটে ফেলছে, আবার জাদু দিয়ে গলা জোড়া লাগিয়ে দিচ্ছে । ঠিক করলাম, আমিও জাদু শিখবো। ছোটবেলায় রূপকথা পড়তে আমি খুব পছন্দ করতাম। বন্দে আলী মিয়ার রূপকথা ছিল আমার খুব প্রিয়। স্বপ্নে প্রায় দেখতাম, আমি বন্দে আলী মিয়ার রূপকথার জাদুর দেশে চলে গেছি। জাদু দিয়ে পাল্টে দিচ্ছি সবকিছু। জাদুর প্রতি আমার আকর্ষণটা উন্মাদনায় পরিণত হয় কলেজে উঠার পর, সিরাজগঞ্জের জাদুকর আবদুর রশিদের জাদু দেখে। সচেতনভাবে একজন জাদুশিল্পী হওয়ার স্বপ্নটা বোধহয় তখন থেকেই দেখতে শুরু করি। ম্যাজিক সম্পর্কিত রাজ্যের বইপত্র ঘাটাঘাটি করে শুরু করলাম ম্যাজিক প্র্যাকটিস। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাকে সেই স্বপ্ন নিয়ে তখন বেশি দূর যেতে দেয় নি। একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আমরা প্রাণ নিয়ে কোনরকমে পালিয়ে বাঁচি। জাদুর যেসব যন্ত্রপাতি আমি তৈরি করেছিলাম সব পুড়ে ছাড়খার।’
১৩.
আপন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ স্মৃতিচারণ করে জানাচ্ছেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই খেয়ালি ছিলাম আমি। পেশার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। আমি আসলে কখনও ভাবিনি ভালো একটা চাকরি দরকার। ভাবনায় পড়ার আগেই চলে যাই যুদ্ধে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে ভাবলাম, কিছু একটা করা দরকার এবার। শুরু করলাম টিউশনি। খুব দরদ দিয়ে ছাত্রদের পড়াতাম। এর ভেতর ঢাকা বেতারে ক্ল্যাসিকাল বাঁশি বাজানোর প্রস্তাব পেলাম। কিছুদিন যেতে না যেতে দেখি মানুষ বানের পানির মতো শহরে আসছে। কাজের জন্য, খাবারের জন্য হাহাকার। রাস্তা নেই, ঘাট নেই। ভালো তেমন কিছুই নেই। অনেকে আবার ফোড়ন কেটে যাচ্ছিল আমাদের দেশ নিয়ে। তবু স্বপ্ন দেখে যাচ্ছিলাম। দেশের এই অবস্থায় শহর ছেড়ে ছুটলাম গ্রামে। গ্রামের স্কুলগুলোর খুবই করুণ অবস্থা। ছাত্রদের শরীর ছিল কাঠির মতো। তাদের ভালোবেসে অন্তর দিয়ে পড়ানো শুরু করলাম। তবে আমাকেও তো বাঁচতে হবে। চটি ক্ষয়ে যেত আবার ঠিক করতাম। কাঠমিস্ত্রি তার দক্ষতার জন্য টাকা পায়, আমি আমার পড়ানোর দক্ষতার জন্য টাকা পেতাম। তবু মাস শেষে ঘরে ফিরতাম খালি হাতে। সব সময় নিজের টাকা দিয়ে অন্যের অভাব-কষ্ট দূর করতে চাইতাম। কারণ আমার চেয়েও মানুষের অনেক কষ্ট দেখেছি। কষ্টের দিনের এই মাস্টারিই সম্ভবত আমার প্রথম চাকরি। ১৯৭৭ সালে পর ম্যাজিক শুরু করি। বিটিভি ম্যাজিকের কস্ট দিতে পারত না। কিছুটা জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর চারদিক থেকে অনেক অফার আসতে শুরু করে। এর ভেতরও আমি দশটা শো করলে তার ছয়টাই করতাম চ্যারিটি শো। এটাও পেশা হিসেবে নিতে পারিনি। এখন পর্যন্ত ম্যাজিকটাও আমার নেশা।’
১৪.
জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের আজকের বিশ্ববরেণ্য জাদুশিল্পী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিটিভির যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে, তেমনই বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সায়ীদ স্যার ১৯৭৭ সালের ঈদের আনন্দ মেলা জুযেল আইচের জাদু দিয়ে শুরু করেছিলেন। তবে এর আগেও দু’তিনবার বিটিভিতে জাদু প্রদর্শন করেছেন জুয়েল আইচ, কিন্তু বিপুল তারকাখ্যাতির দ্যূতি ছড়ালেন এই আনন্দমেলাতেই । এরপর থেকে জুয়েল আইচ একের পর এক অসাধারণ সব শো করতে থাকলেন এই বিটিভিতেই। বাংলার জাদুকে স্বমহিমায় পুন:প্রতিষ্ঠিত করলেন, নব নব চিন্তা দিয়ে জনপ্রিয় করে তুললেন। বিটিভির মাধ্যমেই দেশের ও দেশের বাইরেও হয়ে উঠলেন জনপ্রিয়। মিষ্টি হাসি আর সরল উপস্থাপনায় বিটিভিতে আনলেন নতুন চমক। এভাবেই বিটিভি হয়ে উঠলো তাঁর আপন ভূবন। আর তাই দেখতে পাই, বিটিভির ইতিহাসে মাত্র একবারই শুধুমাত্র জাদু নিয়ে যে আনন্দ মেলা প্রদর্শিত হয়, সেটাও করেন জুয়েল আইচ। শিল্পীর নামে আনন্দমেলার নামকরণও সম্ভবত: সেটাই প্রথম, সেটাই শেষও বোধকরি। ১৯৯২ সালে ‘জুয়েল আইচের জাদু জগৎ’ নামে সেই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। আর আমি তখন স্যারের সহকারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় জুয়েল আইচের সে অনুষ্ঠানেও যৎসামান্য ভূমিকা রাখার সুযোগ পাই। খুবই মনে পড়ে সেসব দিনের কথা। কী নিরন্তর কর্মসাধনায়, বাবংবার রিহার্সেল করে জুয়েল আইচ আনন্দমেলা দারুণভাবে সফল করতে পেরেছিলেন, তার অন্তরালের অনেক কিছুই আমি দেখারও সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রচন্ড পরিশ্রমী এবং অসম্ভব স্বাপ্নিক মানুষ জুয়েল আইচের প্রকৃত শিল্পী সত্ত্বার অন্তর্নিহিত শক্তিই তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য, অসম্ভবকে মঞ্চে প্রদর্শণের সাধনায় অবিরত চেষ্টায় নিমগ্ন থাকতে দেখেছি আমি। জাদুই যে তাঁর ধ্যান ও জ্ঞান সেটা আমি পরে তাঁর সাথে কাজ করতে গিয়ে আরো সুস্পষ্টভাবে টের পেয়েছি।গভীর মনোনিবেশ ও জ্ঞান চর্চা ছাড়া যে কোন স্বপ্নই সার্থক করে তোলা যায় না, সেটাও আমি ভালোভোবে জেনেছি তাঁর দলের সদস্য হিসেবে কাজ করার সময়ও।
১৫.
আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশে যাদুর সম্রাট হিসেবে পরিচিত এই গুণী শিল্পী জুয়েল আইচের গৌরবময় ভূমিকা ততটা আলোচিত হতে দেখি না। অথচ তিনি সরাসরি সস্মুখ সমরে অংশ নেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তিনি যখন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র তখনই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। উপলব্ধি করলেন পাকিস্তানের নির্যাতনে বাংলাদেশীদের দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ওদের শোষণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই উপায় আর সেটা হল সশস্ত্র সংগ্রাম। তাই জীবনের মায়া ছেড়ে নেমে পড়লেন হিংস্র হায়ানাকে বধ এবং দেশকে শৃংখলমুক্ত করার সংগ্রামে। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানার পেয়ারাবাগান নামক স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে হঠাতে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কখোনো গেরিলা যুদ্ধে আবার কখনো সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। অনাহার, অনিদ্রা, পায়ের গভীর ক্ষত, চিকিত্সাবিহীন ‘সুইসাইড মাইগ্রেন’ নিয়ে দিনরাত ছোটাছুটি আর নিষ্ঠুরতর প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধের কথা ভাবলে জুয়েল আইচ আজো শিউড়ে ওঠেন। অসংখ্য প্রিয়জনকে হারানোর স্মৃতি তাঁর হৃদয়কে এখনো ভারাক্রান্ত করে। নিজের জীবন রক্ষা পেলেও পাক হানাদার এবং তাদের দোসরদের হাতে সহায় সম্বল সবই হারান। সম্পূর্ণ নিজস্ব অবস্থায় নতুন করে আবার জীবন শুরু করেন। স্বাধীনতার গৌরব ছাড়া তখন তাঁর আর কিছুই ছিল না। যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার কতোটুকু পূরণ হয়েছে সে সম্পর্কে জুয়েল আইচ বলেছেন, ‘অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলাম। এই স্বপ্নে আবেগের পরিমানই ছিল বেশি, বাস্তবতা ছিল কম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই বাস্তবতার মুখোমুখি হই, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন হোঁচট খায়। মুক্তিযুদ্ধ করার সময় মনে হয় না কোনো মুক্তিযোদ্ধা কল্পনাও করে নি যে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চল্লিশ বছর পর এতোটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে। তবু এখনো আমাদের স্বপ্ন দেখতেই হবে। তাই স্বপ্ন দেখি, অবশ্যই একদিন দেশের রাজনীতিকরা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা বুঁঝতে পারবেন। স্বপ্ন ছাড়া মানুষের জীবন অর্থহীন। স্বপ্নই মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা। স্বপ্নই আমাদের এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে, আমরা বেঁচে আছি।’
১৬.
তাঁর কাছে জাদু কেবল শিল্প হয়ে ওঠে না, জীবন হয়ের জন্য অসম্ভব আশাবাদের হাতিয়ারও হয়ে ওঠে। বিশ্ববিখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ জাদু নিয়ে প্রচলিত নানা সংস্কার-কুসংস্কার বিষয়ে বলে থাকেন, ‘জাদুতে কোন মন্ত্র নেই; আছে হাতের সাফাই। মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য জাদুতে এ অভিনয়। এই দুইয়ের সমন্বয় হলেই সফল জাদু হবে।’ জুয়েল আইচ মনে করেন জাদুতে অলৌকিক বলে কিছু নেই, ‘জাদু এমন একটি শিল্প, যা পুরোপুরি বিজ্ঞান সম্মত। জাদু প্রদর্শনের মধ্যে আছে কিছু কৌশল। তন্ত্রমন্ত্র বা জাদুর কাঠি জাদু প্রদর্শনের অলংকার মাত্র। জাদুর প্রাণ হলো বিজ্ঞান। গান বা নাচ শেখার জন্য যেমন চর্চার দরকার, তেমনি জাদু দেখানোর জন্যও চর্চা দরকার। চর্চার মাধ্যমে যিনি যতো ভালো করে কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারবেন, তিনি ততো বড় জাদুকর।’
১৭.
ভবিষ্যতে একটি ম্যাজিক একাডেমী খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এখন তিনি এ ব্যাপারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর জাদু শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন সফল হবে কী? আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারক, প্রণেতাদের ঘুম ভাঙবে কবে? কারণ জাদুশিল্পের প্রসারের মধ্য দিয়ে যুক্তিবাদি ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ সৃষ্টি যতটা সহজে সম্ভব, ততটা অন্য কোন শিল্প মাধ্যমে নয় বলেই আমি মনে করি। তাই নানান মাত্রিকতার শিল্প জাদুকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্রমে অর্ন্তভুক্ত করা গেলে যুক্তির প্রসার ঘটবে, সাম্প্রদায়িক ও মৌলাবাদের বিকাশ রুদ্ধ হবে।সুস্থ ও মানবিক সমাজ বির্নিমাণে তাই জাদুসহ এ ধরনের শিল্প মাধ্যমের বিকাশে, চর্চায় সরকারের আরো বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। জুয়েল আইচ স্বপ্নবান মানুষ, শিশুদের ভালোবাসেন বলেই বলতে পারেন, ‘আমি চাই দেশের সব শিশুর কাছে অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে। যদি সম্ভব হতো তাহলে জাদুর মাধ্যমেই তা করে দিতাম।’ আমরাও চাই তাঁর আশাবাদের জয় হোক। আর আমি জানি, তিনি যা স্বপ্ন দেখেন, তার জন্য কাজও করেন। কারণ তিনি কাজকেই ধর্ম বলে মানেন, তিনি বলেন, ‘কাজ না করে অলসভাবে পড়ে থাকলে জীবনকে উপভোগ করা যায় না। জীবনকে উপভোগ করতে চাইলেও কাজ করতে হবে। আন্তরিকভাবে ভালোবাসার কাজটা করে যেতে হবে। কারো পরাজয় যেন আমার জয়ের কারণ না হয়। যে কাজ করে সে-ই তো ভুল করে। সুতরাং ভুল করা বিষয় না, বিষয়টা হচ্ছে কাজ করা। কাজ করলে ভুল হবেই। কাজ না করে ভালো কর্মী হওয়ার কোন মানে নেই। আন্তরিকতার চেয়ে, ভালোবাসার চেয়ে বড় মন্ত্র আর কিছু নেই। সেটা জীবন জয়ের জন্যই হোক আর শিল্প সাধনারে ক্ষেত্রেই হোক না কেন।’ আর এসব মিলিয়ে তাই সৃষ্টিশীলতার আপন বৈভবে আলোকিত জুয়েল আইচের ক্ষেত্রে কবি জীবনানন্দকে স্মরণ করে নিশ্চিত করেই বলা যায়, ‘সকলেই শিল্পিী নয়, কেউ কেউ শিল্পী।’
১৮.
আমাদের ‘ঈশ্বর’ লৌকিক নাকি অলৌকিক এবং ঈশ্বর বিশ্বাস বিষয়ে জুয়েল আইচের ভাষ্য আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলছেন, ‘ঈশ্বর’ লৌকিক নাকি অলৌকিক, এ নিয়ে কথা বলার চেয়ে বরং ঈশ্বর বিশ্বাসের কথা বলি। বিশ্বাস সবসময় সত্য। যেখান থেকে অবিশ্বাস শুরু, মিথ্যার সূচনা সেখানেই। আমার ঈশ্বর বিশ্বাসের জায়গাটা অনেক বড়। প্রচলিত ঈশ্বর বিশ্বাসের সঙ্গে তা হয়তো নাও মিলতে পারে। আমাদের এই সৌরজগত লক্ষ কোটি ছায়াপথের মধ্যে অনু-পরমানুর সমান। এই বিশাল ইউনিভার্সের অতি ক্ষুদ্র এক গ্রহ হলো পৃথিবী। এই পৃথিবীর অতি নগন্য এক প্রাণী আমরা। আমাদের মেধা-বুদ্ধি-ধারনা খুব সীমিত। আমাদের চিন্তাশক্তিও খুব সীমাবদ্ধ। চারপাশের গন্ডির মধ্যে ঘুরপাক খায় আমাদের চিন্তা-চেতনা। তাই ঈশ্বরের অসীম পরিধি কল্পনা করা আমাদের সাধ্যের বাইরে।’
১৯.
এবার তাঁর পরিবারের কিছু কথা জানা যাক। জুয়েল আইচের বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগে। স্ত্রী বিপাশা আইচ ও একমাত্র মেয়ে খেয়া আইচকে নিয়ে সংসার জুয়েল আইচের। স্ত্রী বিপাশা একদিকে সংসার সামলান অন্যদিকে আবার তাঁর যাদুর সফল সহযাত্রীও। জুয়েল আইচ পেয়েছেন দেশে-বিদেশের অসংখ্য উল্লেখযোগ্য পুরস্কারও। সৃজনশীল শিল্প চর্চার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই গুণী শিল্পী বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন দেশসেরা জাতীয় পুরস্কার ‘একুশে পদক’। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে কাজী মাহমুদুল্লাহ স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা জাতীয় পুরস্কার বেস্ট ম্যাজিশিয়ান অব দ্যা ইয়ার। সোসাইটি অব অ্যামেরিকান ম্যাজিশিয়ান ১৯৮১ সালে জুয়েল আইচকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর দখলে প্রায় দেড়শ’র মতো পুরস্কার রয়েছে।
২০.
জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের প্রিয়, পছন্দ-অপছন্দের কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাক। প্রিয় খাবার : শাক, সবজি, ডাল, ভাত- যেকোনো ভালো খাবারই আমার প্রিয়। ভালোর দুটো রকম আছে। কোনোটা খাওয়া ভালো, কোনোটা খেতে ভালো। আবার কিছু খাবার আছে খাওয়াও ভালো, খেতেও ভালো। যেমন ডিম। প্রিয় গান : রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, ফোক গান, ব্যান্ডের গানসহ সব ধরনের গানই ভালো লাগে। তবে গানের বাণী পছন্দ হতে হবে। সেই সঙ্গে গানটি অবশ্যই সুরেলা হতে হবে। কণ্ঠসংগীত ও যন্ত্রসংগীত (ইনস্ট্রুমেন্টাল) দুই ক্ষেত্রেই শাস্ত্রীয় ধারা আমাকে মুগ্ধ করে।প্রিয় সিনেমা : উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের নেশা ধরানো কিছু সিনেমা আছে। যেমন: সবার ওপরে, হারানো সুর। উত্তম-সুচিত্রা জুটির সবগুলো ছবিই প্রিয়। এ ছাড়া ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীও খুব প্রিয়। প্রিয় জাদুশিল্পী : প্রিয় জাদুশিল্পীর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলব ডেভিড কপারফিল্ড। শুধু জাদুশিল্পী নন, মানুষ এবং বন্ধু হিসেবেও তিনি অসাধারণ। দেশে আবদুর রশিদ সাহেব ছিলেন, তাঁর জাদু ভালো লাগত। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে আমার অনেক জাদুশিল্পী বন্ধু আছেন, তাঁদের জাদুও ভালো লাগে। অবসর : শুধু অবসর আমি কখনো কাটাই না। হয়তো বই পড়ছি, টিভি দেখছি। এসব থেকে বিনোদন যেমন পাচ্ছি, তেমনি কিছু শেখার-বোঝারও চেষ্টা করছি। ইদানীং আমি ফেসবুক ব্যবহার করতেও শুরু করেছি।’
২১.
তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন বাঙালি জাদুশিল্পী। তাঁর তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা কেউ ছুঁতে পারেনি আজ অবধি। জাদু দেখিয়ে আনন্দ দেন তিনি দর্শকদের, নিজেও খুব আনন্দের মাঝে থাকতে চান সবসময়ই। তাঁর প্রিয় প্রজন্মের জন্য জুয়েল আইচ ‘এই বেঁচে থাকাটাই তো আনন্দের…’ শিরোনামের শব্দশিল্পে আপন অনুভবকে তুলে ধরেছেন, লিখেছেন, রেখাচিত্র এঁকেছেন এভাবে, ‘আনন্দ বিষয়টা খুবই অদ্ভুত। একই সাথে একে সংজ্ঞায়িত করা যায়, আবার যায় না। আনন্দ মূলত শরীর এবং মনের এক সমন্বয়, যা একটির অনুপস্থিতিতে অন্যটিকে অনুভব করা যায় না। আমরা মানুষরা কিন্তু জন্ম থেকেই এক অবধারিত নিয়তি নিয়ে ঘুরছি—একদিন আমাদের এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। সেই চলে যাওয়ার মধ্যকার যেই সময়টুকুর মধ্যে হাজারো চড়াই-উতরাই রয়েছে। কে কতটা সুদৃঢ়ভাবে সেই সময়টা পার করতে পারে তার মধ্যেই কিন্তু আনন্দের সংজ্ঞা নিহিত।
২১.২
জীবনের এই বন্ধুর পথের কষ্ট আর সুখ দুটোকে একসাথে করতে পারাই আনন্দ। আর আনন্দ আসলে পাওয়ার চেয়ে খুঁজে নেওয়াটা বড় বিষয়। আনন্দ গ্রহণের মানসিকতাও সবার থাকে না। কেউ দেখা যায় একবার কষ্ট পেলে সেই কষ্টকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে চলে, আবার অনেককে দেখা যায় বারবার কষ্ট পেলেও শুধু আনন্দটুকু নিয়ে বাঁচে। আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখব আমাদের জীবনে আনন্দের পরিমাণ অনেক বেশি কিন্তু তারপরেও মানুষ দুঃখের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। কারণ দুঃখের তীব্রতা বেশি। আমি সবসময়ই আনন্দে থাকি, থাকার চেষ্টা করি। আর আমার নিজের অবস্থান থেকে আনন্দে থাকাটা খুব সহজ। আমরা যারা স্টেজে পারফর্ম করি, তাদের কাছে দর্শকদের অভিব্যক্তি দেখার যে অনুভূতি তার কোনো তুলনা নেই। নিজের পছন্দের কোনো মানুষকে সারাদিন আপ্যায়ন করে ওই আনন্দ পাওয়া যায় না, যেটা ওই দুই মিনিটের জাদু দেখিয়ে পাওয়া যায়। একজন দর্শকের চোখে মুখে যেই আনন্দ লেগে থাকে, তার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আমি একবার অসুস্থ অবস্থায় বারডেমে ভর্তি হয়েছিলাম। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার ঠিক একটু আগে আমার সাথে একজন দেখা করতে এলেন। খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কেমন আছেন? আমি উত্তরে বললাম, আমি খুবই ভালো আছি। তিনি অত্যন্ত অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার ট্রলি চলে এসেছে আর আমি নাকি ভালো আছি বলছি। জাদুকর মহাশয় কি কৌতুক করছেন কিনা তাই চিন্তা করছিলেন তিনি। আমার কথা হলো আমি আমার জন্মের আগেই মারা যেতে পারতাম, জন্মের সময় মারা যেতে পারতাম, ছোটবেলায় কিংবা তরুণ বয়সে আমার কিছু হতে পারত। সেসবের কিছুই না হয়ে আমি এখনো বেঁচে আছি। এই বেঁচে থাকাটাই কি আনন্দের না? আমার মনে হয়, আনন্দকে খুঁজে নিতে হবে নিজেকেই। কেউ চাইলে নর্দমার মাঝেই খুঁজে নিতে পারে সুবাসিত গন্ধ। কারণ সে একবার এমন গন্ধ পেয়ে গেছে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই মনে হয় দুঃখকে আলিঙ্গন করে থাকা। কোনো কষ্টের উপন্যাস মানুষ আগ্রহ নিয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় আনন্দের বই-ই বোরিং লাগে। অধিকাংশ মানুষই তাদের আনন্দের মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখতে জানে না, যত না তারা দুঃখবিলাসের পেছনে সময় দেয়।
২১.৩
একবার গাইবান্ধায় একটা অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। ওখানে নাকি রাতের বেলায় মেয়েরা অনুষ্ঠান দেখতে যেতে পারে না। পরে সেখানকার বেশ কিছু নারী সংগঠন আমার সাথে দেখা করতে এল। তারা অনুরোধ করলেন যেন আমি অনুষ্ঠানটা দিনের বেলায় করি। আমি তাদের কথা চিন্তা করে একটা বাড়তি শোয়ের আয়োজন করেছিলাম। আমি তখন একটা ম্যাজিক দেখাই, যেটা দেখে ছেলেরা অজ্ঞান হয়ে যায়। ভাবলাম মেয়েদের শোতে এই ম্যাজিক দেখানো যাবে না, মেয়েরা তো আরও বেশি ভয় পাবে। কিন্তু কেন জানি শেষমেশ ম্যাজিকটা রুটিনে রাখলাম এবং অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, মেয়েদের কেউই অজ্ঞান হয়নি। তারা বললেন, আগে থেকেই এই ম্যাজিকের কথা তারা জানতেন। তাই চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন আর ম্যাজিক শেষে হাতে তালি দিয়েছেন। তখন বুঝলাম তাদের শক্ত নার্ভের রহস্য! আমি যখনই কোনো সমস্যায় পড়ি, চিন্তা করি, কিভাবে আমি আমার জীবনের আরও কঠিন সময়গুলো পার করে এসেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনবার আমি প্রায় মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি। কিভাবে বেঁচে আছি সেটা এখনো মিরাকেল মনে হয়। এসব চিন্তা করলে মনে হবে বর্তমানের সমস্যা একদমই সেরকম কিছু না। আর সেই জীবনে আনন্দ কোথায়, যেটার পেছনে কোনো সংগ্রামের গল্প নেই? সেটা তো বরং সাদামাটা। কাজেই পরিশ্রম করে যেটা অর্জন, সেটা অনেকই আনন্দের।’
২২.
জুয়েল ভাইয়ার জন্মদিনে আবারো তাঁকে জানাই নিত্য শুভ কামনা ও শুভেচ্ছা। জন্মদিনে আবারো প্রত্যাশা করছি আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি তাঁর সুস্থ ও সুন্দর কর্মময় দীর্ঘ জীবন। আপনার নিরন্তর জয় হোক জুয়েল ভাইয়া। আবারও অভিনন্দন, শুভেচ্ছা নিরন্তর। আগামি দিনগুলো সবান্ধব, স্বজন-প্রিয়জনদের সবাইকে সাথে নিয়ে সুস্থ ও সুন্দর কাটুক, সেই প্রত্যাশাও রইল অহরহ।

আবদুল্লাহ আল মোহন
১০ এপ্রিল, ২০১৬ / ১০ এপ্রিল, ২০১৭/ ১০ এপ্রিল, ২০১৯/ ১০ এপ্রিল, ২০২০

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর