আবদুল্লাহ আল মোহন
১.
একাধারে মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। ইতিমধ্যে দেশ ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছড়িয়েছে তার সুপরিচিতি। যে কোন শিল্প মাধ্যমের মানুষই স্বভাবতই ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতি নির্বিশেষে সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন। জনপ্রিয় এবং শক্তিমান শিল্পী রাইসুল ইসলাম আসাদও তেমন একজন। ছয়-ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের জন্মদিন আজ। জীবনের সাড়ে ছয় দশক পেরিয়ে এসেছেন তিনি। অনন্য শিল্পী, প্রিয় অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ ৬৭ বছরে পা রাখলেন আজ। কিংবদন্তি অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের জন্ম ভাষা আন্দোলনের পরের বছর ১৯৫৩ সালের ১৫ জুলাই, ঢাকায়। ছিলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র। ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে যখন ডাক পড়লো, তখন মুক্তিকামী বীরসেনানীদের সঙ্গে তিনিও ঝাঁপিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে। তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া ‘স্বাধীনতা’। মহান মুক্তযুদ্ধের এই অকুতোভয় গেরিলা যোদ্ধার জন্মদিনে তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, ফুলেল শুভেচ্ছা। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এখন পর্যন্ত তিনি ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘অন্য জীবন’, ‘লালসালু’, ‘দুখাই’, ‘ঘানি’ ও ‘মৃত্তিকামায়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি এ সম্মাননা লাভ করেন।
২.
জীবনের এতগুলো বসন্ত পেরিয়ে এলেও জন্মদিনে কখনই খুব বেশি উচ্ছলতা দেখাননি তিনি। বরাবরের মতোই দিনটি তিনি সাদামাটাভাবেই পালন করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই আজকের নেই বিশেষ কোনো আয়োজন। নিজের মতো করেই নিজ বাসায় সময় কাটাবেন। জন্মদিন পালন বিষয় নিয়ে সম্মুখ সমরের গেরিলা যোদ্ধা, একাত্তরের অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেছেন, ‘আমি কখনোই আসলে জন্মদিনে কিছুই করি না। সবসময়ই চুপিচুপি নিজের মতো করেই দিনটি পার করার চেষ্টা করি। কিন্তু এবার মনে হয় না আর চুপিচুপি পার করতে পারবো। তবুও সবার কাছে দোয়া চাই যেন ভালো থাকি, সুস্থ থাকি। আমার ভক্ত-দর্শকের জন্য সবসময়ই আমার শুভকামনা।’ দেশপ্রেমিক এই অসীম সাহসী বীর গেরিলা যোদ্ধা দেশকে ভালোবাসেন মায়ের মতোই। শিল্প জীবন যাপন করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করেন অকৃত্রিমভাবে সকল কাজের ক্ষেত্রেই। বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই আমেরিকায় থাকতে হয় কিংবদন্তি অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদকে। কারণ সেখানে তার স্ত্রী তাহিরা দিল আফরোজ ও একমাত্র মেয়ে ডা: রুবায়না জামান থাকেন। তাই স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে প্রায় সময়ই রাইসুল ইসলাম আসাদকে আমেরিকায় যেতে হয়। আবার যখন দেশে থাকেন তখন চেষ্টা করেন নাটক টেলিফিল্মে অভিনয় করতে। তবে বর্তমান সময়ের নাটকগুলোতে মা-বাবার চরিত্রের খুব কম উপস্থিতি বলে রাইসুল ইসলাম আসাদের মতো গুণী অভিনেতাকে মাসের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই শুটিংবিহীন সময় কাটাতে হয়।
৩.
দেশ স্বাধীনের পরপরই মূলত ১৯৭২ সালে মঞ্চে ও টেলিভিশনে রাইসুল ইসলাম আসাদের অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয়। তবে চলচ্চিত্রে তার সম্পৃক্ততা ঘটে ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। এরপর ১৯৮০ সালে সালাহউদ্দিন জাকীর ‘ঘুড্ডি’, ১৯৮১ সালে সৈয়দ হাসান ইমামের ‘লাল সবুজের পালা’, ১৯৮৪ সালে কাজল আরেফিনের ‘সুরুজ মিঞা’-সহ ৫০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মুগ্ধ করেছেন এদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শককে। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এখন পর্যন্ত তিনি ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘অন্য জীবন’, ‘লালসালু’, ‘দুখাই’, ‘ঘানি’ ও ‘মৃত্তিকামায়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি এই সম্মাননা লাভ করেন।
৪.
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেছেন, ‘আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু এখনো অনেক পথ বাকি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অনেকেই স্বাধীনতার মূল ইতিহাস উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকেই সঠিক কথা বলতে চায় না। রাজাকার, আলবদররা অর্থনৈতিকভাবে এখন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই আমাদের এখন সচেতন হতে হবে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দেখে ইতিহাস খুঁজলে চলবে না। আমাদের দেশে আগে ১৭০০ সিনেমা হল ছিল এখন নেমে এসেছে সোয়া ৩০০তে। যাইহোক, সঠিক ইতিহাস জানতে নিজের বুদ্ধি বিবেক দিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। এ প্রজন্ম গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করেছে। এটা কেউ তাদের মাথায় বাড়ি দিয়ে শিখিয়ে দেয়নি। দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এটা কারো দয়ার মাধ্যমে হয়নি। তাই সবকিছু মনিটরিং করতে হবে। কিভাবে দেশ স্বাধীন হলো? কে করল? কারা করল? ৭ মার্চের ভাষণ কেন দেওয়া হয়েছিল? নিজের বোধ জ্ঞান দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করতে হবে। এ দেশে এখন অস্থির অবস্থা চলছে। ধর্মকে অনেকেই ভালোবাসে না। সব ধর্মভীরুতা। বুঝে ধর্ম-কর্ম করতে হবে তো।’
৫.
৫০টিরও অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা আসাদ অভিনয়ের মতো পড়াশোনায়ও ছিলেন মেধাবী। পুরান ঢাকার শিক্ষা-সংস্কৃতির আবহে বেড়ে ওঠা রাইসুল ইসলাম আসাদ মনোবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাইসুল ইসলাম আসাদ ১৯৭৯ সালের ৯ই নভেম্বর তাহিরা দিল আফরোজের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার একমাত্র কন্যার নাম রুবায়না জামান।
৬.
১৯৭১ সালে ২নং সেক্টরের গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে ঢাকার উত্তরে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তার গেরিলা কমান্ডার ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। যুদ্ধ থেকে পাওয়া না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে আসাদ বলেছেন,‘আমার কখনো আক্ষেপ হয় না। একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এটা অনেক বড় পাওনা। স্বাধীন দেশে বসে আক্ষেপের ভাবনাও ভাবছি এটা কম কিসে? তবে সে স্বাধীনতা ভূখণ্ডের। কিন্তু সংস্কৃতির স্বাধীনতা বিভিন্ন কারণেই হোঁচট খাচ্ছে। সংস্কৃতির বিপ্লব ছাড়া রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন আর চেতনা শাণিত হয় না। দেশ আজ ধর্মান্ধ, মৌলবাদ, উগ্রবাদীদের রাহুগ্রাসে। আসলে আমাদের মূল ভাবনা থেকে এখন নানা কারণেই অনেক দূরে।’
৭.
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি সমমনাদের নিয়ে গঠন করেন ঢাকা থিয়েটার। ১৯৭২ সালে প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয়, তারপর ‘আমি রাজা হব না’ এবং ‘সর্পবিষয়ক গল্প’ নামের ২টি নাটক যার মাঝে বিরতি ছিল। তার ভাষায়, ‘অভিনয় করব এমন ভাবনা স্বপ্নেও ভাবিনি। একজন মঞ্চ নাটককর্মী হিসেবে কাজ করব। কিন্তু নির্ধারিত চরিত্রের অনুপস্থিতির কারণে কীভাবে যেন জীবনের প্রথম মঞ্চ নাটকেই কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করলাম। এরপর একই বছরের শেষদিকে স্বাধীন বাংলা বেতারের আবদুল্লাহ বাকীর হাত ধরে বেতারে কাজ শুরু। ওই বছরই শুরু হলো খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) চলচ্চিত্রের কাজ। চরিত্রের প্রয়োজনে তাতে অভিনয়ও করলাম।’ সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী ও প্রয়াত বাদল রহমান তখন ভারতের পুনায় চলচ্চিত্রের ওপর শিক্ষাগ্রহণ (১৯৭৯) শেষে দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে জাকী চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন বলে স্থির করেছেন। আমাদের করা মঞ্চ নাটকের প্লট নিয়ে ঘুড্ডি ও ঘূর্ণি নামে দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হবে। বিরতির আগে-পরে দেখানো হবে। আমার থাকার কথা ঘূড্ডির পেছনের দিকের সহকারী পরিচালক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করলাম, তখন তা ঘূর্ণি নয়, হয়ে গেল ঘুড্ডি। শুটিং শুরু হলো নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা কেল্লায় এক কস্টিউমে কোনো স্ক্রিপ্ট ছাড়াই। এখনো সেই ঘুড্ডির মতোই ভেসে বেড়াচ্ছি।’
৮.
রাইসুল ইসলাম আসাদ অভিনয়ের পাশাপাশি গানও গেয়ে থাকেন। তিনি প্রথম গান গেয়েছিলেন ঘুড্ডি ছবিতে। আসাদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে এইসব দিনরাত্রি, সংশপ্তক, হৃদয়ের ছবি, ১৯৭১ (টেলিফিল্ম), পৌষ ফাগুনের পালা, চিঠি আসে না। উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩), ঘুড্ডি (১৯৮০), নতুন বউ (১৯৮৩), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), পাতঙ্গ (হিন্দি) (১৯৯৩), সুজন সখী (১৯৯৪), অন্যজীবন (১৯৯৫), সত্যের মৃত্যু নেই (১৯৯৬), বুকের ভেতর আগুন (১৯৯৭), লাল দরজা (১৯৯৭), হঠাৎ বৃষ্টি (১৯৯৮), কীর্তনখোলা (২০০০), লালসালু (২০০১), আধিয়ার (২০০৩), দুখাই (২০০৪), লালন (২০০৪), দূরত্ব (২০০৬), ঘানি (২০০৬), মনের মানুষ (২০১০), আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১), একই বৃত্তে (২০১১), মাটির পিঞ্জিরা (২০১৩), মৃত্তিকা মায়া (২০১৩) ও শিশুতোষ চলচ্চিত্র গাড়িওয়ালা (২০১৪) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
৯.
রাইসুল ইসলাম আসাদ একজন অভিনেতার আড়ালে কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা এটা সব মহলেই অজানা ছিল। ‘আসলে এগুলো বলার নয়, বলতে বা জানাতে ভালো লাগে না, কেমন যে আত্মপ্রচার টাইপের মনে হয়’ এভাবেই জানালেন নিজের অজানা অধ্যায়। তিনি শাহ আলম কিরণ পরিচালিত বিচার হবে (১৯৯৬) চলচ্চিত্রের কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচয়িতা। এছাড়া হাফিজউদ্দিন পরিচালিত ঘরণীর (১৯৮২) চিত্রনাট্যকার এবং ‘চুড়িওয়ালা’ ছবিরও চিত্রনাট্যকার। জীবনে পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন অনেক। তিনি পদ্মা নদীর মাঝি, অন্যজীবন, লালসালু, দুখাই, ঘানি ও মৃত্তিকা মায়ার (মনোনীত) জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া একাধিকবার বাচসাস, আনন্দলোক, প্রযোজক সমিতি পুরস্কার এবং ভারতের সম্মানজনক ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (এফজেএ)সহ বহু সম্মাননা অর্জন করেন।
১০.
সম্ভাবনাময় পরিচালক সম্পর্কে তিনি বলেন, ঠিক এ মুহূর্তে সেভাবে কারও নাম আসছে না, তবে গাজী রাকায়েতকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে ভালো করবে। ওর পরিচ্ছন্ন চেষ্টা আর মননশীল চলচ্চিত্রের জন্য কার্যকর। এছাড়া কেউ কেউ চেষ্টা করছেন, তাদের কিছু কিছু দিক ভালোও হচ্ছে। আমাদের দেশের শক্তিমান অভিনেতা সম্পর্কে তিনি বলেন, হুমায়ুন ফরীদি আমার দেখা সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শক্তিমান অভিনেতা হতে পারত। কিন্তু নিজেকে শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের সস্তা গিমিকে পরিণত করার ফলে অনেকটাই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। যে নিজেকে কখনোই সস্তা করতে চায়নি তাকেই শেষ পর্যন্ত পরাজিত হতে হয়েছে নষ্ট চলচ্চিত্রের বিক্রেতাদের কাছে। তবে এটাও সত্য, শিল্পী ফরীদির সমকক্ষও কেউ হতে পারেনি মঞ্চ-নাটক-চলচ্চিত্র যেটাই বলি না কেন।
১১.
রাইসুল ইসলাম আসাদ ভারতীয় বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রকারের সঙ্গে একাধিক কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে গৌতম ঘোষ, বাসু চ্যাটার্জি ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত অন্যতম। এছাড়া দেশের খান আতাউর রহমান, শেখ নিয়ামত আলী, তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য। দেশীয় চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রে এখন মেসেজ ও গল্প নেই। একই বৃত্তে আবর্তনের ফলে সিনেমা হল একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট মানুষরা বেকার হয়ে পড়ছে। দর্শক হলবিমুখ, ইউরোপ-আমেরিকার পুঁজিবাদী করপোরেট ব্যবসার ধাক্কায় আজ আমরা বেসামাল। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে যোজন যোজন।’
১২.
অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ মনে করেন, ‘সেলিম আল দীন ছিলেন ভিন্ন ভাবনার অপূর্ব এক কারিগর’। ২০১৬ সালে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সেলিম আল দীন পদক’ পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি জানাচ্ছেন, ‘যে কোনো প্রাপ্তিই আনন্দের। আর যদি সেটা হয় প্রিয় বন্ধু বা সহকর্মীর নামে, তাহলে আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আমাকে নাসির উদ্দীন ইউসুফ যখন এ পদক প্রাপ্তির কথা জানালেন, আনন্দের পাশাপাশি অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গিয়েছিল। ১৮ আগস্ট নাট্যাচার্যের জন্মদিনে জাতীয় নাট্যশালায় আমাকে এ সম্মান প্রদান করবে ঢাকা থিয়েটার ও শিল্পকলা একাডেমি। এখন সে দিনটির অপেক্ষায় আছি।’ আর সেলিম আল দীনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় পার করেছেন, তার স্মৃতি নিয়ে বলেছেন, ‘আমার আর সেলিম আল দীনের শুরুটা হয়েছিল একই সময়ে। ১৯৭২ সালে দুটি নাটকে আমরা একসঙ্গে কাজ করি। বহুবচন থেকে ফজলুর রহমানের ‘আমি রাজা হব না’ এবং অন্যটি সেলিম আল দীনের ‘সর্পবিষয়ক গল্প’। তারপর নাট্যচক্র শেষে আমরা ঢাকা থিয়েটার শুরু করি। একে একে তার লেখা ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘শকুন্তলা’, ‘চাকা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘হাত হদাই’সহ আরও অনেক নাটকে কাজ করেছি। তিনি একদিকে যেমন অভিভাবক ছিলেন, তেমনি ছিলেন অকৃত্রিম বন্ধু। তর্ক যেমন হতো, তেমনি আলোচনাও জমত সবচেয়ে বেশি। নাটক থেকে শুরু করে সঙ্গীত, পালা, বহুবিধ অভিনয়রীতি নিয়ে তার ভাবনা ছিল সবসময় শেকড়সন্ধানী। এ কারণেই মনে হয়, সেলিম আল দীন ছিলেন ভিন্ন ভাবনার অপূর্ব এক কারিগর। একের পর এক নাট্যসৃজনে তিনি বাংলা নাটকের নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছেন। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা নাটকের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা সেলিম আল দীন।’ দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে বলছেন, ‘দেশ আজ ধর্মান্ধ, মৌলবাদ, উগ্রবাদীদের রাহুগ্রাসে। ভেতরে ভেতরে তারা অনেক শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় এ দেশের মানুষ যদি জেগে ওঠে, এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাহলে এই রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’ আর এখনকার টিভি নাটকে কোন প্রবণতা আপনার চোখে পড়ে?-প্রশ্রে অকপটে জানান, ‘এখন নাটক দেখা বিরক্তিকর। একটা দৃশ্য শেষ হতে না হতেই বিজ্ঞাপন শুরু হয়ে যায়। আমি নিজেও চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’
(তথ্যসূত্র : বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট)
আবদুল্লাহ আল মোহন
১৫ জুলাই, ২০১৬ / ১৫ জুলাই, ২০১৭/ ১৫ জুলাই, ২০১৮/ ১৫ জুলাই, ২০১৯