আবদুল্লাহ আল মোহন
১.
সারাদেশেই করোনাভাইরাস যুদ্ধে সচেতনতায়, সহযোগিতায় বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর মানুষের, নানা জনের বিভিন্নমুখী ইতিবাচক কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে, আশাবাদী করছে বিজয়ী হতে। অবরুদ্ধ করোনাকালে করোনাভাইরাস যুদ্ধে জনসচেতনতায়, গণ মানুষের সহযোগিতায় শেরপুরের এসপি কাজী আশরাফুল আজীমের (Kazi Ashraful Azim) অনুকরণীয় তৎপরতার বিভিন্ন খবর জেনে, সংবাদ পড়ে আমাদের সফলতার আশাবাদ জোরালো হচ্ছে, কাজে উৎসাহ বাড়ছে, মানসিক শক্তি ও সাহস নবরুপে জাগছে। এসপি কাজী আশরাফুল আজীমদের মতোন মানুষদের এই সব ইতিবাচক কাজের খবর তাই আমাদের মনের জোরকে বাড়ানোর পাশাপশি সকলকে একতাবদ্ধ করতেও দারুণভাবে প্রাণিত করছে। শেরপুরের এসপি কাজী আশরাফুল আজীমের নিরলস কাজের উল্লেখ করে সম্প্রতি দৈনিক সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত নানান সচিত্র সংবাদ তাই আমাদের অন্ধকার সময়ে আশার আলো দেখায়, মানুষের উপর আস্থা ও বিশ্বাস গভীর করে।
২.
শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের পরিকল্পনায় ও নেতৃত্বে ‘আপনি ঘরে থাকুন, খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ আমরা পৌঁছে দিব।’ মানুষকে ঘরমুখী করতে শেরপুর জেলায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নেমেছে করোনা কুইক রেসপন্স টিম ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম। শহর থেকে গ্রাম, যেখানেই যার ঘরে খাবার নেই তাদের জন্য শেরপুরে সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে তারা। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক, চা দোকানিসহ প্রান্তিক মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করে আসছে তারা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তায় রাস্তায় নেমে খেটে খাওয়া মানুষকে একদিকে তারা করোনা সম্পর্কে সচেতন করছে, অন্যদিকে খাদ্যসামগ্রী হাতে দিয়ে ঘরে থাকারও নির্দেশনা দিচ্ছে। জানা গেছে, শেরপুর জেলা পুলিশের সহায়তায় এখন পর্যন্ত দশ হাজারের বেশি পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তার কার্যক্রম শেরপুরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রান্তিক লোকজন খাবার পাওয়ায় লকডাউন পরিস্থিতি পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে। খাবারের সংস্থান হওয়ায় শেরপুরের অধিকাংশ দিনমজুর ও প্রান্তিক মানুষও লকডাউন মেনে বাসায় থাকার পরিবেশ পাচ্ছেন। দিনমজুরদের ঘরে রাখার এই মডেল অন্য জেলায় কার্যকর করার পরামর্শ সংশ্নিষ্টদের। এভাবেই দেশের অধিকাংশ জেলায় লকডাউন পরিস্থিতির নিয়মাবলি শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, ‘আসলে একটুখানি সদিচ্ছা। আর সেই সাথে আমরা সমবেতভাবে নিরন্তর চেষ্টা করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
৩.
নানাজনের আপ্রাণ প্রচেষ্টার আশাবাদের খবরের বিপরীতে আমজনতার সচেতনতার বোধের অভাব নিয়েও প্রশ্ন জাগে মনে। সম্প্রতি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার একজন কৃষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকতে বাধ্য হন। খবর পেয়ে যথারীতি তার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে নিজেই এগিয়ে যান পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। গিয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রী এবং মা আলাদা থাকলেও তাদের প্রায় ৩ বছর বয়সী সন্তানটি পিতার সাথেই একই ঘরে রয়েছে। পরে তাদেরকে আলাদা ঘরে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু শিশুটির জন্য বিপদের আশংকা থেকেই যায়। এই হচ্ছে আমাদের স্বজনদের ভালোবাসার নমুনা এবং করোনাভাইরাস সচেতনতা বিষয়ে এই হচ্ছে প্রকৃত অবস্থা। এটা কেবল শেরপুরের কোন একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে নানা গণমাধ্যমে। সরকারী নির্দেশনায় ঘরে থাকছে না অনেক মানুষই, মানছে না আইসোলেশন, কোয়ারাইন্টাইনের নিয়মাবলী। নিজেকে ঘরবন্ধী রেখে করোনা সংক্রমণের চেইনকে ভেঙ্গে ফেলার প্রক্রিয়ায় আমাদের ইতিবাচক আচরণের তীব্র অভাববোধ, অনাগ্রহ প্রকাশ ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত করবে আমাদের। এই সহজ-সরল সত্য অনুধাবনে আমাদের চরম অবহেলা ভয়াবহ হুমকির তৈরি করবে, চরম মূল্য দিতে হবে হয়তবা। আর সে কারণেই কেবল খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানেই সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেদের কার্যক্রম, নিরন্তর সচেষ্ট রয়েছেন তৃণমূলেও ব্যোপক গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ভয়াবহ করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে জীবন রক্ষায় শেরপুরের এসপি কাজী আশরাফুল আজীম।
৪.
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালাচ্ছেন শেরপুরের এসপি কাজী আশরাফুল আজীমের নেতৃত্বে। আমাদের জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কাজটিকে সরকারের আমলাতান্ত্রিকভাবে গ্রহণ না করে মানবিকভাবে দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করেছেন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘সামাজিক দূরত্ব’ কথাটার সাথে বলা হচ্ছে ‘শারীরিক দূরত্ব, কিন্তু সামাজিক সংহতি’র কথাও। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে সকলেই জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিশেষভাবে রাজনৈতিক সচেতনতার ওপর। সেই প্রক্রিয়ায় শেরপুরের এসপি কাজী আশরাফুল আজীমের উদ্যোগ অনুসরনীয় বলেই বিবেচনা করি। কোভিড-১৯ যে সেখানে ভয়াবহ চেহারা যাতে না নেয় তার জন্য সমাজ-সংস্কৃতির অবশ্যই সরকারেরও ইতিবাচক ভূমিকার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞগণ। আসুন করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তাকে যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে রোগ-নজরদারি, আইসোলেশনের প্রতি আরো সক্রিয় অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করি। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি জেলায়, প্রত্যন্ত গ্রামেও প্রত্যাগত মানুষকে ঘরে ঘরে থাকতে হবে সরকারের নির্দেশনা মেনেই। এই ভয়াবহ করোনাকালে নানাবিধ নাগরিক তৎপরতার গুরুত্ব রয়েছে। প্রয়োজন আছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা এই বিপদ থেকে মুক্ত হবো নিশ্চয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকেও বিতাড়িত হবে করোনাভাইরাস।
৫.
করোনা কুইক রেসপন্স টিম ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম তালিকা তৈরি করে কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাজির হচ্ছেন যেমন তেমনি আবার গোপন খবরের ভিত্তিতে কারো কারো দরজায় গিয়ে ডাক দিয়েই হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ত্রাণের ব্যাগ। যাদের ঘরে খাবার নেই, কিন্তু কাউকে আবার বলতেও পারছেন না, এমন কর্মহীন মানুষগুলো ত্রাণ পেয়ে বেশ আনন্দিত। এখন কোনো কাজও নেই বলে অনেকের ঘরে খাবারও নেই। কিন্তু সে কথা কাউকে বলতেও পারছেন না অনেকেই। আবার মান হারানোর ভয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণও নিতে পারছেন না কেউ কেউ। এভাবে খবর নিয়ে ত্রাণ দেওয়ায় অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত অসহায় মানুষের কষ্টে লাঘবের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি ও তার টিম মনে করে, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত অসংখ্য পরিবার এখন অনেক কষ্টে আছেন। বিশেষ করে দিনমজুর, চা বিক্রেতা, রিকশাচালকসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা অনেকেই কারও কাছে বলতেও পারছেন না। আবার প্রকাশ্যে গিয়ে ত্রাণও নিতে পারছেন না। এখন তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় তাদের কষ্ট লাঘব করতে এলাকাভিত্তিক তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়িতে নীরবে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সচেষ্ট তার নেতৃত্বে। ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলতে, প্রচারেও অনীহা দেখাচ্ছেন তিনি ও তার সহযোগীরা।
৬.
শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের মতো পুলিশ সদস্যদের ভালো কাজগুলো পাল্টে দিচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক সব ধারণা। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে থাকার শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে তাদের মতোন মাঠের সক্রিয়দের কাছ থেকে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবাদ দমনেও প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ। ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’- বাংলাদেশ পুলিশের এমন স্লোগানের মিল খুঁজে পাওয়া যায় শেরপুরের জেলা পুলিশের কিছু কর্মকাণ্ডে। অপরাধ দমনে শুধু গতানুগতিক পুলিশিং নয়, অসহায় মানুষের পাশে থেকে একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শেরপুর জেলা পুলিশ এর আগেও। করোনাভাইরাসের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাস্তবমুখী বেশ কিছু কাজ করে জনপ্রিয় পুলিশ সুপার হিসেবে আলোচিত হয়েছেন।
৭.
একজন সচেতন নাগরিক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবাসহ আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্তরের মানুষজন- প্রত্যেকেরই যেন তাদের নিজ নিজ ভূমিকা নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি বা দোদুল্যমানতায় না ভোগেন, সেই প্রত্যাশও করছি। কারণ অনেক সময়ই দেখছি অনেককে নিজ দায়িত্ব বা ভূমিকা পালন করতে গিয়ে নানান বিরুপ অভিজ্ঞতা কিংবা তাচ্ছিল্যের মুখেও পড়তে হচ্ছে। প্রত্যেকেই নিজের দায়িত্বের কথা জানবেন এবং তা পালন করবেন- এটাই এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রতাশিত। কিন্তু উল্টোচিত্রও পাই। নানান নেতিবাচক খবরে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে হয়ে। আবার আশাবাদীও হয়ে উঠি প্রবলভাবে অনেকের নিরলস সক্রিয়তায়, নিরন্তর প্রচেষ্টার সংবাদে। যেমনটি খুশি হয়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এই কৃতি ছাত্র এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক প্রিয় ভাইটির মানবিক ইতিবাচক সক্রিয়তার সচিত্র খবরে।
৮.
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন প্রতিনিয়ত আশার আলো জ্বালিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে এককাট্টা হতে উদ্বুদ্ধ করছেন, সেই মুহূর্তেই আজিমদের মানবিক কাজগুলো দৃষ্টান্ত হোক, মানুষের জন্য উপকারে আসুক। করোনাভাইরাস যুদ্ধে সচেতনতায়, সহযোগিতায় শেরপুরের এসপি আজীমের অনুকরণীয় তৎপরতার জয় হোক। উল্লেখ্য, এসপি আজীম পুলিশের সর্বোচ্চ রাস্ট্রীয় সম্মান হিসেবে তিনবার পিপিএম পদক পেয়েছেন। পরপর তিনবারও ময়মনসিংহ রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হওয়া শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার আজীম। বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতার এই সন্তানের তাই মুক্তিযোদ্ধা পুলিশদের সম্মানে কৃতজ্ঞতা সমাবেশ ও সংবর্ধনা সভার আয়োজনসহ শেরপুর জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করতে পারা, পুলিশ লাইনে খাবারের মান উন্নয়ন ঘটানোর মতোন অনেক ইতিবাচক কাজই আমার মতোন অনেককেই খুশি করে, ভবিষ্যতে আরো বেশি প্রত্যাশাকেও বাড়িয়ে দেয়। আর তাই নোবেলজয়ী বাঙালি অধ্যাপক অর্মত্য সেনের কথাই সব সময় মেনে বলি- ‘কাজ করে যাও। স্বীকৃতির আশা করো না।’
আবদুল্লাহ আল মোহন
১৬ এপ্রিল, ২০২০