Sunday, মে ১৯, ২০২৪
শিরোনাম

দেখে এলাম গলুই সিনেমা; রহিম ইবনে বাহাজ

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সরকারি অনুদানের সিনেমা গলুই পবিত্র ঈদুল ফিতরের ২০২২ মুক্তি পায়, এস এ হক অলিক এর পরিচালনা এবং সহযোগী প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। গলুই সিনেমা প্রায় ৮০ শতাংশ শুটিং হয়েছে আমার নিজ জেলা জামালপুর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ এবং ২০ শতাংশ টাংগাইল মহেরা জমিদার বাড়ি, পরিচালক এস এ হক অলিক লোকেশন নতুনত্ব কিছু দেখানোর চেষ্টা করেছেন এবং গল্পের প্রয়োজনে বহু শ্রম ঘাম ঝরিয়েছেন যাঁরা চলচ্চিত্র টি দেখেছেন ভালোই আচঁ করতে পারবেন, গলুই চলচ্চিত্রটি শুরু হতেই বেশ আলোচনায় ছিল সিনেমা পাড়া, চলচ্চিত্র দর্শক প্রদর্শক। জামালপুর জেলা শহরে কোন সিনেমা হল নেই, সে কারণে বিশেষ ব্যবস্থায় চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। গত ৪ই মে মাদারগঞ্জ উপজেলা নুরুন নাহার অডিটোরিয়াম গলুই সিনেমা দেখি। খুব ভালো হয়েছে শুরুটা। প্রথম ৪৬ মিনিট সংলাপ লোকেশন আর ব্যাক গ্রাউন্ডে সাউন্ড সিস্টেম এবং মিউজিক কানে ভালো লাগিনি, একটা চলচ্চিত্রের মিউজিক সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিচালক এস এ হক অলিক এখানে একটু সজাগ দৃষ্টি দিলে ভালো হতো, শীর্ষ নায়ক শাকিব খান অভিনয় করেছেন তেমন মনে হয়নি, তাঁর এক্সপেরিয়েন্স খুব ভালো ছিল, পুরো সিনেমা জুড়ে শাকিবের মেকাপ ভালো হয়নি কন্টিনিউ হয়নি, শাকিব খান যখনই বাড়িতে ফিরে ততবারই খাওন দাও মা, খিদে লাগছে। এ সংলাপ শুনতে শুনতে আমার পাশে বসা এক দর্শক বলেই ফেলল! শাকিবের শুধু খিদেই লাগে, আসলে দোষ তো শাকিবের না, গল্পে আছে পরিচালক নির্দেশ মোতাবেক অভিনয় করা লাগে, এখানে অভিনেতা, অভিনেত্রীর ইচ্ছে মতো চলেনা, ভারতের পরিচালক আদুরে গোপাল কৃষ্ণের মতে শুধু একটি গল্পকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলাই ফিল্ম মেকিং নয়। এমনকি পরপর কত গুলো দৃশ্য সাজিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নয়। নিজস্ব সংস্কৃতি এবং অভিজ্ঞতার সম্মিলনেই তৈরি হয় সার্থক কোনো ছবি, সমগ্র জীবন ব্যয়িত হতে পারে কোন একটি মাত্র ছবি করতে। কারণ সব টুকু মনোযোগ পূর্ণ জীবনী শক্তি ঢেলে দিতে হয় স্বপ্নের ছবিটির জন্য। তার মানসিক বিবর্তনের অন্য নাম সিনেমা এবং সিনেমাই অস্তিত্ব। নায়িকা পূজা চেরী অভিনয় বেশ ভালো হয়েছে এবং কি পারদর্শী বলা যায়। গলুই চলচ্চিত্র যখন শুটিং শুরু তখন অনেকই সোস্যাশাল মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলতে শুনেছি , একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে শাকিব খান জুটি ভালো হবেনা, কিন্তু পরিচালক এস এ হক অলিক সবকিছু পিছনে ফেলে গ্রাম বাংলা গ্রামাঞ্চলে ঐতিহ্য ধরে রাখতে যে বিষয় গুলো গুরুত্ব বহন করে লাঠি খেলা এবং নৌকা বাইচ শুটিং করতে গিয়ে ব্যাপক পয়সা খরচ করেছেন। নদীর দুই ধারে এতো লোক হয়েছিল ইতিমধ্যে প্রকাশিত সংবাদে দেখেছি, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের গলুই চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে শাকিব খান বলেন, আমি মুগ্ধ জামালপুর এর লোক আমায় এতো ভালোবাসে আমি জানতাম না, এখানের লোকেশন খুবই চমৎকার, আর আমার দুই যুগ অভিনয় জগতে এতো লোক শুটিং হয় আমি কিভাবে কাজটা করবো এবং ভয়ও পেয়েছি। প্রতিদিন শুটিং শুরুর আগেই লোকের সমাগম। তবে গলুইয়ের জন্য দর্শকদের মনে রাখার মতো ছবি।
শীর্ষ নায়ক শাকিব খান অভিনয় গান নৃত্যটা জুতসই হয়নি। বৃষ্টির গানটি ভালো হয়েছে, আবহ সংগীত পরিচালক আরো ভালো হওয়ার আবশ্যক ছিল। শাকিব খানের চাচার অভিনয় করেছেন অভিনেতা আজিজুল হাকিম বহু পারদর্শী জাত অভিনেতা কিন্তু সমস্যা হলো তার যে মুখে দাড়ি লাগানো স্পট বুঝা যায়, তার স্ত্রী ময়না কি কারণে মারা যায় কোন দৃশ্য দেখানো হয়নি, শাকিব খান এর চরিত্রের লালু ছোট বেলায় আজিজুল হাকিম এর বয়সের যে ছাপ ২৫ বছর পর একই রকম মনে হয়েছে, এবিষয়ে কথা বলছিলাম পরিচালক রেজা হাসমত এর সাথে তিনি বলেন, মারাত্মক ভাবে ভুল উপস্থাপনা করেছে আজিজুল হাকিম কে পরিচালক এস এ হক অলিক গল্পটা পরিপূর্ণ দিতে পারেনি একটা পরিবারের প্রত্যেক সদস্য গুরুত্বপূর্ণ আজিজুল হাকিম কে আরো কিছু অভিনয় আদায় করা যেত। শিল্পি কুমার বিশ্বজিৎ এর নৌকা বাইচ এর গান টা ভালো হয়েছে এবং এস আই টুটুল এর গানটা বেশ ভালো হয়েছে, শাকিব খান গলুই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তাঁর সেরাটাই দিয়েছেন। পরিচালকের চাহিদা অনুযায়ী করেছে কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ করলে বুঝা যায় যখন কোন বিজ্ঞাপন শুটিং হয় মাত্র ৩০ সেকেন্ড বা এক মিনিটের সারাদিন লাগে কেন, একটা উদাহরণ দেই সাল তারিখ মনে নেই। আমি যখন মিডিয়া জগতে কাজ করি নাট্য পরিচালক আশুতোষ সুজন একটা বিজ্ঞাপনে কাজ করেন মাই ওয়ান টেলিভিশন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও নায়িকা পূর্ণিমা উত্তরায় একটা শুটিং বাড়িতে শুট হয়। নায়িকা পূর্ণিমার হাসির দৃশ্য পরিচালক আশুতোষ সুজন কোন ভাবেই তার মনপুত হয়না, সেট হতে পূর্ণিমা উঠে বলল, আমি আর পারছিনা, অন্য কাউকে নিয়ে কাজটি করুন। ঘন্টা তিনেক বিরতির পর শুটিং শুরু হলো এবং অনেক সট নেওয়ার পর ওকে কাট বলে পরিচালক আশুতোষ সুজন তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। শীর্ষ নায়ক শাকিব খান কে যেকোনো অভিনয় করানোর গুরু দায়িত্ব পরিচালক বর্তায়। শাকিব খান চলচ্চিত্রে প্রায় দুই যুগ ধরে কাজ করছেন , তাঁর ভিত্তিটা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে যে শ্রম ঘাম ঝরিয়েছেন, এখন সেই অনুপাতে তাঁর বর্তমান চলচ্চিত্র গুলো আমি ব্যক্তিগত ভাবে আশাহত। যখন চলচ্চিত্র অঙ্গনে বিভিন্ন উপাধি পেলো যেমন: সুপার স্টার, কিংখান, শীর্ষ নায়ক, পারিশ্রমিকও বাড়িয়ে দিলেন, কিন্তু আমি বলব শাকিব খান তাঁর যোগ্য পাওনা নিচ্ছেন, এক দিনে শাকিব খান তৈরি হয়নি। এখন পরিচালকরা চিন্তা করে শাকিব খান মানেই ছবি হিট, ব্যবসা সফল ছবি অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা আছে। হলিউড, বলিউড ও টালিগঞ্জ এবং কি সমগ্র মহাবিশ্ব যত বড় নায়ক হোক শুধু নাম দিয়ে বাণিজ্যিক ছবি লোকসান গুনতে হয় সালমান খান, শাহরুখ খান আমিরখান মানেই হিট চলচ্চিত্র নয়, তাদেরও ফ্লপ ছবি আছে। আমার জবান যখন খুলে বিভিন্ন প্রসঙ্গ চলে আসে এতো প্যাচাল এর কারণ, শাকিব হতে কাজ আদায় করুন। লেখা শেষ করবো পরিচালক এস এ হক অলিক দারুণ দৃঢ়তা, সৎ সাহস, শ্রম, ঘাম ঝরিয়ে গলুই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করছেন সত্যি প্রশংসার দাবিদার। আমি যেদিন ছবিটি দেখতে যাই, দেখি ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ছবি দেখতে এসেছেন, অডিটোরিয়ামে তিল ঠাঁই ছিল না, দর্শক হতাশ হয়নি, সবাই বলাবলি করছে ভালোই হয়েছে। এস আই টুটুল এর গাওয়া গানটি অনেকে গুণ গুণ করে গাইছে, হল মালিক আশার প্রদীপ জ্বলতে দেখেছে, এধারা অব্যাহত থাকলে পূর্বের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে এমনটা মনে করছেন চলচ্চিত্র পরিচালকগণ এবং কি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গুলো অর্থ লগ্নি করতে দ্বিধা করবেন না। গলুই ব্যয় বহুল চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সরকারি অনুদানের সিনেমার পাশে থেকে দৃঢ়তা, সৎ সাহস দিয়েছেন পরিশেষে বলবো গলুই সিনেমা দেখুন। বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসুক।

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর