Sunday, মে ৫, ২০২৪
শিরোনাম
কাশিনাথপুরের ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মতবিনিময় সভাপুন্ডুরিয়ায় রুপকথার আড্ডা বন্ধুমহলের ব্যাতিক্রমী ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিতসাঁথিয়ায় আগুনে কৃষকের ৭ টি ঘর ভূস্মিভুত, মানবেতর জীবন যাপনবেড়ায় কৃষি জমির মাটি ও বালি কাটার দায়ে জেল জরিমানাসাঁথিয়ায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে মে দিবস উদযাপনকরমজায় বিট পুলিশিং ও মতবিনিময় সভাবেড়ায় বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসতিসকা নামাজ আদায়অগ্রনী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা উধাও, গ্রেফতার ৩ কর্মকর্তাপাবনায় বিপুল পরিমাণ টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালিয়ে গেলেন ঠিকাদারসাঁথিয়ায় ডেপুটি স্পিকারের উদ্বোধনকৃত নতুন হাট ভেঙ্গে দিলেন এসিল্যান্ড

সখের বাইক, আলাউল হোসেন

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

প্রতিবেশী চাচা চেয়ারম্যান হয়েছে। তার বিভিন্ন সভা-সমাবেশ বা মহড়ায় নিজের অবস্থান জানান দিতে হবে। তাই উচ্চ মাধ্যমিক ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ কৃষক বাবার কাছে মোটর সাইকেল কেনার আবদার করেছে। কিন্তু কৃষক বাবা অসহায়; দিন এনে দিন খায়। অতঃপর আকাশ বিষ খায়। আত্মহত্যা করে বাবাকে শিক্ষা দিতে চায়- কেন তার অঢেল অর্থ নাই…

এ যাত্রায় আকাশ প্রাণে বেঁচে গেলে কৃষক বাবা পরম মমতায় নিজের শেষ সম্বল ১০ শতাংশ জমি বিক্রি করে তাড়াহুড়ো করে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে ছেলেকে বাইক কিনে দেয়। আহা বাইক!

বাইক কেনার মাত্র এক মাসের মধ্যেই আকাশ গত পরশু সন্ধ্যার পরে কাজীরহাট রোডের কদমতলার কাছাকাছি সড়কে দূর্ঘটনার শিকার হয়। সন্ধ্যার পরে ১০০ গতিতে বাইক চালাতে গিয়ে অপরপ্রান্ত থেকে আসতে থাকা সিএনজি’র সাথে সংঘর্ষ হয়। এসময় আকাশের দুই পা ও বুকের হাড় ভেঙে যায়। এখন সে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। কৃষক বাবার জমি বিক্রির টাকায় কেনা সাধের বাইকের চেহারাও দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। আর রাস্তা দিয়ে ধীর গতিতে চলতে থাকা সিএনজি’র চালক ও যাত্রীদের অবস্থাও গুরুতর। এভাবেই প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হয়ে কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করছে, কেউ কেউ করছে পঙ্গুত্ববরণ।

সাম্প্রতিক সময়ে মোটরবাইক কম বয়সীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কিশোর-তরুণরা সহজাত প্রবৃত্তির কারণেই গতি ভালোবাসে। সর্পিল ভঙ্গিতে ৯০ বা ১০০ গতি নিয়ে বাইক চালাতে ওরা ভালোবাসে। এই বয়সে তাদের মধ্যে পুরুষত্বের অহং কাজ করে। বন্ধুদের সামনে নিজেকে জাহির করতে মোটরসাইকেল কিনতে চায়। আবার রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে কিশোর-তরুণরা মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। যখন দেখে মোটরসাইকেল থাকলে ক্ষমতার দাপট দেখানো যায়, তখনই কিশোররা বাইক পেতে চায়। এ প্রবণতা রোধ করতে বাবা-মা আজ অনেকাংশেই ব্যর্থ। সন্তানকে বোঝাতে গেলেই সন্তান মৃত্যুর ঘোষণা দেয়। বাবা-মা বাধ্য হয় বাইক কিনে দিতে।

সংবাদপত্রে কাজ করার সুবাধে এ বিষয়ে আমার বিস্তর অভিজ্ঞতা হয়েছে। সারাদেশের খবর আমি জানি না। তবে বৃহত্তর কাশিনাথপুর অঞ্চলের একটি পরিসংখ্যান আমার কাছে আছে। গত দুই বছরে এ অঞ্চলে কমপক্ষে ১৪ জন কিশোর বাইক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। আর মৃত্যুর পূর্বে কিছু সাধারণ যাত্রী বা পথচারীকে পঙ্গু করে রেখে গেছে। স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণকারী সেই সব কিশোর বাইক কেনার জন্য অভিভাবকদের সাথে জিদ করেছে। কোন অভিভাবকই আপোষে বা খুশি মনে সন্তানকে বাইক কিনে দেয়নি। কখনও আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে, কখনও বিষ খেয়ে, কখনও বা পিতামাতাকে মারধর করে বাইক কিনে দিতে বাধ্য করেছে।

কিশোরদের আত্মহত্যার ঘোষণার সাথে মৃত্যুর একটা যোগসূত্র রয়েছে। দেহের সব যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ব্রেন। দেহের ভেতরের সকল তথ্য ব্রেন পায় হরমোন ও রিসিপ্টরের মাধ্যমে। দেহের বাইরের সকল তথ্য পাচ্ছে পঞ্চ ইন্দ্রিয়, কখনও কখনও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। এই সকল তথ্য সে জমা রাখছে স্মৃতিতে। ব্রেন পুরনো তথ্যের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেহের সকল অঙ্গের সাথে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের নির্দেশ পাঠিয়ে দেহাভ্যন্তরের সুষম অবস্থা বজায় রাখছে আর পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কেও ব্যবস্থা নিচ্ছে। এভাবেই ব্রেনকে ব্যবহার করে মানুষ তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে থাকে। আমরা স্বপ্ন পূরণের কথা বলি। মানুষ যখন ব্রেনকে স্বপ্নের কথা জানায়, ব্রেন সেটাকে নির্দেশনা দেয়। আর এই নির্দেশনার ভিত্তিতেই ব্রেন নিজের জায়গা থেকে কাজ করতে থাকে এবং মানুষের স্বপ্ন পূরণের দিকে অগ্রসর করতে থাকে। ব্রেনকে কমান্ড দিয়ে যেমন মানুষ তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে থাকে, অনুরূপভাবে যদি কেউ কোন খারাপ আশঙ্কাও করে, ব্রেন সেটাকেও হরমোন ও রিসিপ্টরের মাধ্যমে গ্রহণ করে কাজ করতে থাকে। চেতন বা অবচেতন মনে আমরা ব্রেনকে যে ম্যাসেজ দিয়ে থাকি, ব্রেন সে মোতাবেক কাজ করতে থাকে। একারণেই মনোবিজ্ঞানে মানুষকে সবসময় প্রোএ্যাক্টিভ থাকতে বলা হয়। ওই কিশোররা যখনই পরিবারের সাথে জিদ করে মৃত্যুর ঘোষণা দেয় বা মৃত্যুর চেষ্টা চালায়, ব্রেনে তাৎক্ষণিক মৃত্যু নামক বস্তুটি সেটাপ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ব্রেনকে কমান্ড দিতে থাকে। প্রোএ্যাক্টিভ মানুষের আকাঙ্ক্ষা যেভাবে পূরণ হয়, ঠিক অনুরূপভাবেই রিএ্যাক্টিভ মানুষের আশঙ্কাও পূরণ হয়ে যায়।

দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে, কিশোর-তরুণদের বাইক চালানো বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হবে যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাদের কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি না করা। সেই সাথে গাড়ির সিসিও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে আমাদের দেশে বেশ শক্ত আইন রয়েছে। আইনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালালে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ছয় মাস কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু সম্ভবত এই আইনের প্রয়োগ নেই। প্রায়োগিক আইন ছাড়া এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। অভিভাবকসহ উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রামপ্রধান একযোগে সচেতন হলেই কেবল এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। নতুবা আগামীতে কী ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর