Sunday, মে ৫, ২০২৪
শিরোনাম
কাশিনাথপুরের ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মতবিনিময় সভাপুন্ডুরিয়ায় রুপকথার আড্ডা বন্ধুমহলের ব্যাতিক্রমী ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিতসাঁথিয়ায় আগুনে কৃষকের ৭ টি ঘর ভূস্মিভুত, মানবেতর জীবন যাপনবেড়ায় কৃষি জমির মাটি ও বালি কাটার দায়ে জেল জরিমানাসাঁথিয়ায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে মে দিবস উদযাপনকরমজায় বিট পুলিশিং ও মতবিনিময় সভাবেড়ায় বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসতিসকা নামাজ আদায়অগ্রনী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা উধাও, গ্রেফতার ৩ কর্মকর্তাপাবনায় বিপুল পরিমাণ টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালিয়ে গেলেন ঠিকাদারসাঁথিয়ায় ডেপুটি স্পিকারের উদ্বোধনকৃত নতুন হাট ভেঙ্গে দিলেন এসিল্যান্ড

আদ্যনাথ ঘোষ: কবিতাই যার ধ্যান-জ্ঞানঃঅলোক আচার্য

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

এ মুহূর্তে দেশে যেমন প্রকাশ মাধ্যমের অভাব নেই ঠিক সেভাবেই প্রচুর কবি কবিতা লিখছেন। সপ্তাহের সাময়িকীতে তো বটেই, অনলাই গণমাধ্যমগুলোর সাহিত্য পাতায়, ই-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে। যদি ঠিক এই সময়ের কয়েকজন কবির নাম নিয়ে আলোচনা করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই উঠে আসে ভবিষ্যতের বিপুল সম্ভাবনাময় কবি আদ্যনাথ ঘোষের নাম। আদ্যনাথ ঘোষ, একজন জাত কবি। কেউ কেউ একই সাথে সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই বিচরণ করেন। আবার এমন কেউ আছেন কবিতাই যার ধ্যান-জ্ঞান। যে কবিতা নিয়েই বাঁচেন। কবি আদ্যনাথ ঘোষ এমনই একজন মানুষ। তার বিচরণ দেশের প্রতিটি সাহিত্য সাময়িকীতে। এপার বাংলা ছাড়িয়ে ওপার বাংলাতেও তার কবিতা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। কবিতার মান ও ধরন বিবেচনায় তিনি এ সময়ের কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন। তিনি ইতোমধ্যেই পাঠকের মাঝে একটি বিশেষ স্থান নিতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যান্য কবিদের কাছেও তিনি সমাদৃত। কবি আদ্যনাথ ঘোষের কবিতা লেখার শুরুটা আজ থেকে তিন দশকেরও বেশি সময় আগে। পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘পাবনা বার্তা’য় তার প্রথম ’মুক্তি’ নামের একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর তার কবিতা লেখা অব্যাহত থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় কবিতা প্রকাশিত হতে সময় নেয় দীর্ঘদিন। ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় কবিতা প্রকাশিত হয় দৈনিক নয়া রাজনীতি নামের একটি পত্রিকায়। ছাত্রজীবন থেকেই স্থানীয় পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা লেখা শুরু। বিশেষ করে পাবনা বার্তা, দৈনিক ইছামতি, দৈনিক নির্ভর, নয়া রাজনীতি, দৈনিক উত্তর বাংলা’য় নিয়মিত কবিতা প্রকাশিত হতো। কবির শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতঃপর সাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সাতবাড়ীয়া, সুজানগর থেকে এস. এস. সি, সাতবাড়ীয়া মহাবিদ্যালয়, সাতবাড়ীয়া, সুজানগর থেকে এইচ. এস. সি, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ¯œাতক (কলা), ¯œাতকোত্তর (ইতিহাস) ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতকোত্তর (বাংলা) ডিগ্রি অর্জন করেন। যদিও তার কবিতার নিজস্বতার পরিচয় ঘটেছে বা মূলত একজন কবি হিসেবে পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছেন এক দশক আগে। এর কারণ মূলত ২০০০ সালের পর এক দশকের বেশি সময় কবির কবিতা লেখা প্রায় বন্ধ থাকে। ২০০২ সালে তিনি যোগদান করেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। আজও সে পেশাতেই রয়েছেন। শিক্ষক এবং একজন কবি এই দুই-ই তার পরিচয়, তার নিজস্বতা। কাজের ফাঁকে এবং এমনকি কাজের মধ্যেও তার মাথায় ঘোরে কবিতার শব্দমালা। দীর্ঘ বিরতির কবি আবারো লিখতে থাকেন ২০১৪ সাল থেকে। প্রকাশিত হতে থাকে একের পর এক বই।
তিনি লিখতে শুরু করলেন বলেই আমরা বাংলা সাহিত্যে একটি নক্ষত্র আগমনের আভাস দেখছি। তার কবিতার ধারা ইতোমধ্যেই পাঠকমহলে পরিচিতি পেয়েছে। এই কয়েক বছরে তার এগারোটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আলোর রেখা (কাব্য)-অক্টোবর ২০১৫, লাল নীল শাড়ির আঁচল (কাব্য)-২০১৬, জন্মভূমি তুমি মাগো (কাব্য)-২০১৭, হৃদয়ে উতল হাওয়া (কাব্য)-২০১৭, আমি তোমাদেরই একজন (কাব্য)-২০১৭, ভোরের পাখি (কাব্য)-২০১৮, উত্তরের জানালা (কাব্য)-২০১৮, স্বপ্নবালিকা (কাব্য)-২০১৯, বিধিলিপি মন (কাব্য)-২০১৯, একমুঠো স্বপ্নের রোদ্দুর (কাব্য)- ২০২০ ও তৃষ্ণার পৃথিবী ছুঁয়ে (কাব্য) ২০২১। সমকালীন কবিরা তার কবিতার প্রশংসা করেছেন। এই দীর্ঘ বিরতির পর কবির কবিতায় ফিরে আসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এত দীর্ঘ সময় কাব্য চর্চার প্রায় বাইরে থেকে আবার সদর্পে ফেরা অনেকটা কষ্টসাধ্যই বটে। কিন্তু আদ্যনাথ ঘোষ তা পেরেছেন। তবে ২০০০ সালের কবিতা এবং বিরতির পর কবিতার ধাঁচে পরিবর্তন আসে। কারণ এই সময়ে কবি পূর্ণ হয়েছেন। তার চিন্তা চেতনার বিস্তৃতি বেড়েছে। আগে থেকেই কবি জীবনানন্দ দাশের একনিষ্ঠ পাঠক। সে আঁচ তার কবিতায় পাওয়া যায়। প্রিয় কবিকে নিয়ে তার কবিতাও রয়েছে। কবির ’স্বপ্নবালিকা’ কাব্যগ্রন্থের ’কবি জীবনানন্দকে’ কবিতার শেষ তিনটি লাইনে লিখেছেন, ’যদি তার দেখা পাই ভোরের কোনো সন্ন্যাসে/ বিরল দুঃখের মন্দির থেকে চকিত তুলে নেবো/মুছে দেবো তার দীর্ঘকালের অনিদ্রার ধূসর অন্ধকার।’ এই কবিতার কোথাও যেন জীবনানন্দ দাশ স্বয়ং ঘুমিয়ে আছেন। জীবনানন্দ দাশ ছাড়াও আধুনিক কবির কবিতাও তিনি নিয়মিত পাঠ করেন। তার মতে তিনি কবিতা লেখেন, কবিতায় বাঁচেন, কবিতা তার ধ্যান-জ্ঞান। কবিতার প্রতি এই একনিষ্ঠতার কারণেই হয়তো কবিকে সাহিত্যের অন্যকোনো শাখায় পাওয়া যায় না। আসলে আদ্যনাথ ঘোষ মূলত কবি। প্রবন্ধ লিখলেও তা সংখ্যায় কম। কবিতাই তার সাহিত্যের মূল শক্তি। কখনো তিনি প্রেমিক, আবার কখনো একজন পূর্ণ মানুষ। আদ্যনাথ ঘোষের জন্ম পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার হেমরাজপুর গ্রামে ১৯৭৩ সালে। তার পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার ঘোষ এবং মাতা নিভা রানী ঘোষ। একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তিনি উঠে এসেছেন। এ কারণেই হয়তো তার কবিতায় গ্রামের বহুচিত্র-বর্ণনাও চোখে পরে। নারী ও প্রকৃতি তার কবিতার আয়নায় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
তার কবিতার ভাষা সহজ। তবে ভাবার্থ বিবেচনায় সহজবোধ্যতা অতিক্রম করেছে। তবে তা দুর্বোধ্য নয়। কবিতার ভাব, শব্দের ব্যবহার, উপমার প্রয়োগ ব্যাত্যয় ঘটেনি। শব্দগুলো কবিতার প্রয়োজনে একটু ভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। তার ’মনপোড়া’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, ’কামবতী জোছনারা ঠিকানা খোঁজে মানুষের অন্তর পাড়ায়/ তাই রাত্রির আঁধার দহনে জ¦ইলা মরে আগুন ডানায়। এখানে দ্বিতীয় লাইনে জ¦ইলা শব্দটির পরিবর্তে জ¦লে ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু প্রয়োজনে জ¦ইলা ব্যবহার করা হয়েছে। কবি আদ্যনাথ ঘোষের কবিতায় মূলত রোমান্টিসিজম উঠে এসেছে। এটাকে প্রেম বলা যায় তবে সেই প্রেম কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রীক নয়। রোমান্টিসিজম নতুন কিছু না। বরং অধিকাংশ কবিই এ ধাঁচে লিখে থাকেন। তবে তা তুলে আনার প্রকৃতি ভিন্ন। প্রকৃতির সাথেও প্রেম হয়। আবার নারী ও প্রকৃতির মিলনেও প্রেমের স্বরূপ প্রকাশিত হয়। এটাও তার কবিতা এড়ায়নি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার রৌদ্রচুম্বন কবিতায়। তিনি লিখেছেন,’রাতের আলপথ বেয়ে যে নদী সাঁতরায়/চোখে তার জোনাকির ফুল, বুকে তার আয়নাজল/ দেহে তার জোছনার ছর, নাভিছেঁড়া গোলাপের ঢল/ইচ্ছেরা জলরং ঢেলে দেয় পূর্ণিমার খলখলে চাঁদ। তার কবিতায় সার্থক উপমা ব্যবহারেরও পারদর্শীতা চোখে পরে। অবশ্য কবিকে ঢালাওভাবে প্রেমের কবি বলার উপায় নেই। তার কবিতার ভাষায় প্রতিবাদও উঠে এসেছে নিপুণভাবে। শব্দের তীব্রতায় ঝাঁঝরা হয়েছে মানবতার সীমানা। এখানে তিনি প্রতিবাদী। এখানেই তার ভিন্নতা। প্রেমিক আদ্যনাথ থেকে বিদ্রোহী সহমর্মী প্রশ্নীক আদ্যনাথকে দেখতেপ পাই। তার ’কাঁটাতার’ কবিতায় তিনি দৃঢ়কন্ঠে উচ্চারণ করেছেন, ’কাঁটাতার তোমার বন্দনা লেখে/ ফেলানির ঝুলন্ত লাশ/এপাশে ওপাশে দু’পাশের কুয়াশাময় ভোরের নির্জনে/গায় তোমারই বন্দনা ক্রন্দনে! এই সময়ের মধ্যেই তিনি পেয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পুরস্কার। তিনি দেশ পা-ুলিপি পুরস্কার-২০১৭ (উত্তরের জানালা), মহিয়সী সাহিত্য পদক-২০১৭ (হৃদয়ে উতল হাওয়া), কবি ওমর আলী সাহিত্য পদক-২০১৬, অরুণিমা সাহিত্য পদক-২০১৬, কবি জসীম উদ্দীন সাহিত্য পদক-২০১৫ এবং বাংলাদেশ কবিতা সংসদ সাহিত্য পদক লাভ করেন-২০১৫ সালে। তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় এ কবি আগামী ২ জানুয়ারি ৫০ বছর পার করবেন। তিনি লিখতে থাকুন, কবিতার পাঠকদের আরও বেশি কবিতামুখী করুক তার কবিতা এ শুভকামনাই করি সব সময়।

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর