Monday, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
শিরোনাম
ডলি সায়ন্তনীকে নির্বাচনে চান পাবনার সংস্কৃতিকর্মীরাওনার্স পরিচয় দেন ডাক্তার, দিচ্ছেন সর্ব রোগের চিকিৎসাডলি সায়ন্তনীর প্রার্থীতা ফেরার অপেক্ষায় সুজানগর, আমিনপুরের মানুষঅবহেলা অব্যবস্থাপনায় অকার্যকর পাবনার সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, বিপাকে কৃষকসাঁথিয়ায় ভোটার হালনাগাদকারীদের পাওনা দিতে গরিমসি করছেন নির্বাচন অফিসারআটঘরিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা, স্বামী আটকসাঁথিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে মন্দির নির্মাণ করার চেষ্টা ॥ জনমনে অসন্তোষসাঁথিয়ায় চলাচলের রাস্তায় বেড়া,অবরুদ্ধ ১৬ পরিবারআটঘরিয়ায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধনবেড়ায় পাট ক্ষেত থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার

পাবনার মহাসড়কের আতঙ্ক অটোভ্যান

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

আরিফ খান ঃ মহাসড়কে নছিমন, করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মহাসড়কগুলোতে নছিমন ও করিমনের চলাচল প্রায় বন্ধ হলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের চলাচল বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে অটোভ্যানগুলো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়ার মহাসড়কে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) দুই উপজেলায় এই অটোভ্যানের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত সাতজনের। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২৫ জনেরও বেশি।
অটোভ্যানের চালক ও মিস্ত্রিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পায়েচালিত ভ্যানে ব্যাটারি যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে অটোভ্যান। বৈদ্যুতিক চার্জে অটোভ্যানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলে। যাত্রী ও পণ্য নিয়ে অবৈধ এই যানগুলো মহাসড়কে বিভিন্ন ভারি যানবাহনগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলে। দুর্বল ব্রেক ও কাঠামোগত কারণে অটোভ্যানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা বেজায় কঠিন। ফলে মহাসড়কে এগুলো একের পর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এ ছাড়া অটোভ্যানের ব্যাটারি প্রতিদিন চার্জ দিতে হয় বলে এর পেছনে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়ে যাচ্ছে।
বেড়া ফায়ার স্টেশন ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৯ জনুয়ারি পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলায় ট্রাকের ধাক্কায় পাবনা সদর উপজেলার পুটিগাড়া গ্রামের ভ্যানচালক রবিউল বিশ^াস (৬৫) ও আব্দুল মোমিন (৪৫) নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন আরও দুজন ভ্যানযাত্রী। গত ২৬ মে একই মহাসড়কে সাঁথিয়া উপজেলার চাড়া বটতলা নামক স্থানে ট্রাকচাপায় এখলাসউদ্দিন (১৮) নামের এক ভ্যানচালক নিহত হন। তিনি বেড়া উপজেলার খাস আমিনপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ২৯ মে মহাসড়কের বেড়া উপজেলার চাকলা বাসস্ট্যান্ডে বাসচাপায় বেড়ার চাকলা পূর্বপাড়া গ্রামের বাচ্চু শেখ (৫০) নামের আরেক ভ্যানচালক নিহত হন। এর পরে গত ২৮ জুলাই পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের সাঁথিয়া উপজেলার বেঙ্গলমিট নামক স্থানে একটি অটোভ্যানকে বাস চাপা দিলে অটোভ্যানের চালক আবু সাঈদ (৫৫) ও তাঁর ছেলে তাওহিদ (৪) এবং আরেক শিশু যাত্রী রোজা (৫) মারা যায়। নিহত তিনজনের বাড়ি ছিল বেড়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। এ ছাড়া মহাসড়কে গত ১৪ জানুয়ারি সাঁথিয়া উপজেলার ভিটাপাড়ায়, ২৮ জানুয়ারি তলট গ্রামে, ৬ ফেব্রুয়ারি পাটগাড়ি গ্রামে, ২৩ এপ্রিল ও ১১ জুলাই বেড়া উপজেলার সানিলা গ্রামে দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন অটোভ্যানের যাত্রী আহত হন।
বিভিন্ন পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় এক সময় পাঁচ হাজারেরও বেশি নছিমন-করিমন চলাচল করত। কিন্তু বর্তমানে মহাসড়কে এগুলোর চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে সড়ক-মহাসড়কে জায়গা দখল করে নিয়ে নিয়েছে অটোভ্যান। প্রতিযোগিতায় অটোভ্যানের কাছে নছিমন-করিমন টিকতে না পারার কারণেই নছিমন-করিমন হারিয়ে গেছে বলে অটোভ্যানের চালকদের সূত্রে জানা গেছে। বৈদ্যুতিক চার্জে অটোভ্যান চলে বলে এগুলো চালাতে খরচ একেবারেই কম। এ ছাড়া পুলিশি ঝামেলাও নছিমন-করিমনের চেয়ে কম বলে এগুলো এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অটোভ্যান তৈরির কারিগর ও চালকেরা জানান, পায়েচালিত ভ্যানে ব্যাটারি সংযোজন করলেই সেটি অটোভ্যানে পরিণত হয়। রিকশা-ভ্যান চালাতে শারীরিক পরিশ্রম হলেও অটোভ্যান চলে ব্যাটারির শক্তিতে। একটি অটোভ্যানে আট থেকে ১০ জন যাত্রী নিয়ে অথবা পায়েচালিত রিকশা-ভ্যানের তুলনায় চার-পাঁচগুণ মাল নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে ছোটা যায়। এর ব্রেক খুব দুর্বল বলে দ্রুত গতিতে ছোটার সময় একে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই প্রায়ই এটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এ ছাড়া এর চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকার কারণেও মহাসড়কে গিয়ে এটি নিজে যেমন দুর্ঘটনায় পড়ে তেমনি অন্য যানবাহনকেও দুর্ঘটনায় পড়তে বাধ্য করে।
সরেজমিনে বেড়া ও কাশিনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুটি স্থানেই যাত্রী তোলার অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক অটোভ্যান। প্রতিটি অটোভ্যানে আট থেকে ১০ জন করে যাত্রী তুলে নিয়ে বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেগুলো মহাসড়ক ধরে ছুটে যাচ্ছে চাকলা, কাশিনাথপুর, বাঘাবাড়ীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে।
বেড়া বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় অটোভ্যানচালক তোরাব আলী, আব্দুল হকসহ চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, কাছাকাছি দূরত্বের জায়গাগুলোতে যাতায়াতে যাত্রীরা বাসের পরিবর্তে অটোভ্যানে উঠতেই বেশি পছন্দ করেন। তাঁদের দাবি, ব্যাটারির চার্জে চলে বলে অটোভ্যান চালাতে এখন আর শারীরিক কষ্ট হয় না। এ ছাড়া চলেও বেশ জোড়ে। যাত্রী বহন করে প্রতিদিন একেকজনের কমপক্ষে পাঁচ শ টাকা রোজগার হয়।
পাবনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রইসউদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কে অটোভ্যানের চলাচল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে, বড় যানবাহনগুলোকেও বিপদে ফেলছে।’
পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের মাধপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) ইসাহাক আলী বলেন, ‘মহাসড়কে অটোভ্যানসহ তিন চাকার যেকোনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। অল্প জনবল থাকা সত্ত্বেও আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছি। তা সত্ত্বেও এগুলো সুযোগ পেলেই মহাসড়কে নেমে পড়ে। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান আরও কঠোর করা হবে।’

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর