Sunday, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
শিরোনাম
ডলি সায়ন্তনীকে নির্বাচনে চান পাবনার সংস্কৃতিকর্মীরাওনার্স পরিচয় দেন ডাক্তার, দিচ্ছেন সর্ব রোগের চিকিৎসাডলি সায়ন্তনীর প্রার্থীতা ফেরার অপেক্ষায় সুজানগর, আমিনপুরের মানুষঅবহেলা অব্যবস্থাপনায় অকার্যকর পাবনার সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, বিপাকে কৃষকসাঁথিয়ায় ভোটার হালনাগাদকারীদের পাওনা দিতে গরিমসি করছেন নির্বাচন অফিসারআটঘরিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা, স্বামী আটকসাঁথিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে মন্দির নির্মাণ করার চেষ্টা ॥ জনমনে অসন্তোষসাঁথিয়ায় চলাচলের রাস্তায় বেড়া,অবরুদ্ধ ১৬ পরিবারআটঘরিয়ায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধনবেড়ায় পাট ক্ষেত থেকে ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার

করোনায় অর্থসংকটে অসহায় হয়ে পড়েছে বেড়া-সাঁথিয়া-সুজানগরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

গোলাম মাহবুব, আমিনপুর থানা প্রতিনিধি :
বিশ্ব এখন ভুগছে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের জ্বরে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল লকডাউন করা, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা, গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা, সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রেস ব্রিফিং-এর মাধ্যমে সবসময় জনগনের পাশেই আছেন। তার এসব কার্যকরী দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে তিনি সারাবিশ্বে প্রসংশিত হয়েছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। নতুন চারটিসহ মোট ৫টি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী দেশের ভ্যান চালক ও দিনমজুরদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান ভাতা/সহোযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা এদের জন্য অনেকটা স্বস্তির কারণ হয়েছে। এ সকল সহযোগিতা সরকারের প্রতিনিধিরা বিভিন্নভাবে কম বেশি করে অসহায় মানুষের দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন।


কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা কখনো কারো কাছ থেকে এ ধরনের ত্রাণ বা আর্থিক সহযোগিতা নিতে অভ্যস্ত নন, না খেয়ে মরে গেলেও না। সমাজে এই জাতীয় কিছু মানুষের ভেতর সম্মানবোধ রয়েছে। হতদরিদ্র মানুষগুলো ত্রাণ সহযোগিতার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন কারও কাছে যেতে লজ্জাবোধ করে। করোনার কারণেই এখন তারা পরিস্থিতির শিকার। এধরনের মানুষের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্ত, ছোট ব্যবসায়ী, ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, প্রাইভেট স্কুল, বা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক, এক কথায় সমাজের স্বল্প আয়ের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যে সকল ব্যাক্তিরা ত্রাণ বিতরণ করে থাকেন তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে হতদরিদ্রদের সাহায্য করা। ফলে উপেক্ষিত থেকে যায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাছাড়া ত্রাণ বিতরণের সময় যেভাবে গ্রহীতাদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়, এতেও এই জাতীয় সাময়িক সংকটে মানুষদের আপত্তি। চুপিসারে দাতারা তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিলে হয়তো তারাও ওই ত্রাণ নিতে আগ্রহী হতেন।

সুজানগর উপজেলাধীন আছাদগেট, শ্যামগঞ্জের পোস্ট ই-সেন্টার উদ্যোক্তা মো. রাকিবুল আমিন বলেন, “অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর যখন বেকার ঘুরছিলাম তখন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে একটি পোস্ট ই সেন্টার প্রতিষ্ঠা করি। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা প্রদান করে কোন মতে সংসার পরিচালনা করছিলাম। মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের জন্য আমার সেন্টার গত ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। আয়ের অন্য কোন উৎস না থাকায় কেউ আর ধারও দিতে চায় না। ফলে এখন কখনো অনাহারে, কখনো অর্ধাহারে দিন যাপন করছি। সম্মানের ভয়ে কারো নিকট সহযোগিতার জন্য ধর্ণা ধরতে পারি না। খুবই কষ্টের মধ্যে প্রতিটি দিন পার করছি।”


বেড়া উপজেলাধীন মাশুন্দিয়া ভবানীপুর কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের (ননএমপিও শিক্ষক) প্রভাষক সুমন হোসেন বলেন, “কলেজ বন্ধ রয়েছে গত ১৭ মার্চ থেকে। কলেজে কেও না আসায় কলেজ থেকে যে সামান্য সম্মানী পেতাম, তাও পাওয়া যাচ্ছে না। কলেজের পাশাপাশি যে ছোট একটি কম্পিউটারের দোকান চালাতাম তাও বন্ধ হয়ে গেছে গত ২৫ মার্চ থেকে। আয়ের অন্য কোন উৎস না থাকায় এখন অসহায় দিন পার করছি। সরকারের নিকট থেকে ননএমপিও শিক্ষকদের কোন সহযোগিতা না পেলে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে যাবে। “


আমিনপুর থানাধীন একটি স্কুল এন্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রভাষক কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এক যুগ ধরে কলেজে শিক্ষকতা করছি, সরকার কোন বেতন দেয় না। ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়িয়ে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা মাসে পাই। ওই টাকাতেই খুব টানাটানির মধ্যে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছি। আমার মত অনেকেই এরকম অসহায় জীবন যাপন করছে। আমাদের এই অসহায়ত্বে (কেঁদে) খোদার আরশ কেঁপে উঠলেও আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিদের তাতে কিছুই যায় আসে না। এখন স্কুল-কলেজ-টিউশনী সবই বন্ধ। কী খাব? আলুর দাম এখনও একটু কম বলে আলু ভর্তা দিয়েই দুইবেলা এক মুঠো করে ভাত খাই। আমরা শিক্ষক, আমরা কি পারি- ত্রাণের জন্য চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে? পাঁচ কেজি চাউলের জন্য আমাদের ওই লাইনে দাঁড়ানো কি কখনও আদৌ সম্ভব? এ প্রশ্ন আজ জাতির দরবারে পেশ করলাম।


সাঁথিয়া উপজেলাধীন কাশিনাথপুর বাজারের কয়েকজন মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ” গত ২৫ মার্চ থেকে আমাদের দোকান বন্ধ রয়েছে। আমরা জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাই না। দোকানের মালামালের কী অবস্থা জানি না। দোকান বন্ধ থাকলেও সংসার পরিচালনার খরচ থেমে নেই। হঠাৎ বন্ধ হওয়ার কারণে সংসারে তেমন সঞ্চয় না থাকায় দু’বেলা দু’মুঠো খবারের ব্যবস্থা করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। সরকারি কোন সহযোগিতা এখন পর্যন্ত আমরা পাই নাই। এভাবে চলতে থাকলে করোনার হাত থেকে বাঁচার চেয়ে, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে।”


অত্র অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর একই অবস্থা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সাধারণত প্রতিদিন যা লাভ করে, তার সবটুকুই সংসারে ব্যয় করেন। সামান্য আয় থেকে জমানো সম্ভব হয় না বেশিরভাগের।


সরকারের প্রদত্ত সহযোগিতার একটা অংশ সাময়িক সংকটে পড়া এ ধরনের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের মধ্যে উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বণ্টন করা সময়ের দাবী। তা না হলে হয়তো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এসব মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের রক্ষা করা যাবে না। বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সকল মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সংকটে পড়া নাম না জানা হাজার হাজার মধ্যবিত্ত মানুষ।

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর