আবদুল্লাহ আল মোহন
১.
আমার আব্বা আলহাজ্ব মো. আবদুর রশিদ মিয়া আজ ১৭ মে রোববার ভোররাত ৩.৪৫ মিনিটের সময় সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তিনি গত প্রায় দশদিন যাবৎ বেশ অসুস্থ ছিলেন। প্রায় ৯০ বছর বয়সে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তবে করোনা সংক্রমণে নন। (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। কয়েকবার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার রাজনারায়নপুর গ্রামের নিজ বাড়িতেই শেষনি:শ্বাস ত্যাগ করেন আব্বা। এ সময় আমার মা এবং একজন ভাই আব্বার পাশে ছিলেন। করোনাজনিত বিধিনিষেধের কারণে ঢাকায় অবস্থানরত আমরা ভাই-বোনেরা অনেকেই পরম প্রিয় পিতার মুখটি শেষবারের মতোন দেখতে যেতে পারিনি, জানাযাতেও স্বল্পসংখ্যক আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। বাদ জোহর নিজ বাড়িতে জানাযা শেষে পারিববারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। আমার মা ছাড়াও তিনি আমাদের সাত ভাই, দুই বোন, নাতি-নাতনী এবং অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমার পিতা তাঁর পরিবারের ভাই-বোনদের সর্বশেষ প্রতিনিধি হিসেবে আজ তিনিও বিদায় নিলেন শোকের মহাসুমুদ্রে ভাসিয়ে। তিনি নগরবাড়ী ঘাটের ব্যবসায়ী ছিলেন। আব্বা আমৃত্যু জড়িত ছিলেন এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নানান সামাজিক-মানবিক কর্মকাণ্ডর সাথে।
২.
তাঁর একজন অধম সন্তান হিসেবে আপনাদের সকলের কাছে আমার প্রয়াত পিতার যাপিত জীবনকালে ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত যে কোন দোষ-ত্রুটির জন্য সবিনয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তাঁর কাছে কারো কোন দেনা-পাওনা থাকলে আমি অথবা আমার ভাই-বোনদের সাথে যোগাযোগের জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি। সকলের কাছে তাঁর বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া, পরম শান্তি কামনা করছি। এই মহাদূর্যোগের অবরুদ্ধ করোনাকালে আমরা ভাই-বোনদের অনেকেই অসুস্থ পিতার পাশে থাকতে পারিনি- সেই আক্ষেপ-বেদনা-ক্ষত অমোচনীয়। শোককে আদৌও শক্তিতে পরিণত যায় কী না- আমি আসলেই জানি না বলেই আজ পিতা হারানোর ব্যথার অপার নীলের অচেনা মহাসাগরে ভেসে টের পাচ্ছি।
৩.
ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে আব্বার জানাযা, দাফনসহ আনুসঙ্গিক যাবতীয় শেষযাত্রায় সারাক্ষণ যারা আমার মা, ভাইসহ পরিবারের পাশে ছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার অজানা, কেবলই কামনা- সকলের মঙ্গল হোক। শোক সংবাদটি শোনার পর থেকে ফোন করাসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়া, সাহস যোগানো ও শান্তনা জানানো পরম শুভাকাংখীদের সকলের প্রতি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই অসীম শ্রদ্ধা, আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
৪.
দয়া করে মহামারীর সংক্রমণকালে আপনারাও সকলেই নিরাপদ থাকুন, নিজগৃহে থাকার চেষ্টা করুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আমার আব্বাও এই করোনাকালে এলাকার দরিদ্র প্রতিবেশী, অসহায় জনদের প্রতি তাঁর সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নানাভাবে। আর তাই আসুন, আমাদের মানবিক প্রচেষ্টাগুলো অব্যাহত রাখি, নিজে বাঁচি, প্রতিটি মানুষকেই আপনজন মনে করে স্বাভাবিক জীবন যাপনে আরেকেটু সক্রিয় হই, নিজেদের অংশীদারিত্ব বজায় রাখি আমার সদ্য প্রয়াত পিতার মতোন ভালোবাসার আলো জ্বালিয়ে। সকলের কল্যাণ হোক।
আবদুল্লাহ আল মোহন
১৭ মে, ২০২০ / রোববার / ৩.১৫ মি.