আরিফ খাঁন, বেড়া পাবনা : পাবনা বেড়ার পদ্মা-যমুনা ও হুরাসাগরে বর্ষা আসার আগেই গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই নদীতে ব্যাপক পরিমাণে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে এ উপজেলার জেলেদের শুরু হয়েছে মাঝ ধরার ব্যস্ততা।
নদী ও বিল বিধৌত পাবনার বেড়া উপজেলা মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এ উপজেলায় রয়েছে ছোট বড় মোট ৮ টি নদী। বর্ষা এলেই উপজেলার বেড়া পুরান বাজার ও চতুর হাটে চাঁই (দোয়ারি) চাড়ো, পলো, বৃত্তি, বুছনা ইত্যাদি বিক্রির ধুম পরে যায়। তাই চাঁই তৈরিতে ব্যাস্ত হয়ে পরে সংশ্লিষ্টরা। বাড়ির নারীরাই মূলত এসব চাঁই তৈরি করেন।
উপজেলার বেড়া বাজার সংলগ্ন স্থানে বসে চাঁইয়ের হাঁট। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভ্যান বোঝাই করে চাঁই বিক্রির জন্য বিক্রেতারা নিয়ে আসে এখানে। দূর দুরান্ত থেকে মৎস শিকারীরা চাঁই কিনতে আসে এখানে। এক একটা চাঁই তৈরিতে ২ শত থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে জিনিসের মান বুঝে সেগুলো সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ টাকা বিক্রি হয়। বড় আকারের চাঁই তৈরীতে খরচ হয় পনেরশ থেকে দুই হাজার টাকা বিক্রি হয় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা।
সরেজমিনে শনিবার (৬ জুন) চাঁইয়ের হাটে গিয়ে জানা যায়, বেড়ায় মূলত নাগডেমড়া, ফরিদপুর, আটিয়াপাড়া, ক্ষিদিরপুর থেকে চাঁই (দোয়ারি) বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে বিক্রেতারা। সেগুলো সিরাজগঞ্জ, বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন জায়গার জেলে ও পাইকারিরা ক্রয় করেন। চাঁই তৈরির সাথে জড়িয়ে রয়েছে কয়েকশ’ পরিবারের জীবন জিবিকা। চাঁই তৈরির কারিগররা বিভিন্ন এনজিও বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ কিনে চাঁই তৈরি করে। ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দামে বাঁশ কিনে তিনটি চাঁই তৈরি সম্ভব বলে জানা যায়।
চাঁইয়ের হাটে বিক্রি করতে আসা সাঁথিয়া উপজেলার বেওবাড়িয়া আটিয়া পাড়া গ্রামের আজিজুল মোল্লা জানান, প্রতিটি চাঁই বানাতি (তৈরীতে) যা খরচ হয় তা থেকে বিক্রিতে ভালই লাভ হয়। একজন কারিগর সারা দিনে ছোট আকারের দুইটি দোয়ারি বানাবের পারে। গেল বছরের চেয়ে এবছর আগেই বেচা কেনা হচ্ছে দামও একটু বেশি পাচ্ছি।
চাঁইয়ের হাটে ক্রয় করতে আসা সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর বান্তিয়ার চরের তোফাজ্জল মিয়া জানান, চাঁই পাতলে চিংড়ি, বোয়াল, বাইন সহ নানান ধরনের দেশী মাছ ধরা পরে। পরিশ্রমও কম। একবার দোয়ার পেতে কয়েকঘন্টা পর দেখতে হয় মাছ পরেছে কি না। তাছাড়া বাজারে চাঁইয়ে ধরা মাছের চাহিদাও থাকে বেশি কারণ চাঁইয়ে পড়া মাছ গুলো তাজা থাকে। আষাঢ় মাস থেকেই এগুলো বিক্রি হয় পুরো তিন মাস।
একাধিক বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি সহযোগীতা পেলে আরও বেশি চাঁই ও বুছনা বানানো সম্ভব। তাছাড়াও এর সাথে বাঁশ শিল্পও টিকে থাকবে বলে জানান তারা।