নিজস্ব প্রতিনিধি : ভোট মানেই আবহমান গ্রাম বাংলায় উৎসবের আমেজ। প্রার্থীদের ব্যস্ততা, পোস্টার, ফেস্টুন ব্যানারে ছাওয়া জনাকীর্ণ হাটবাজার-চায়ের দোকান। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে পাবনার বেড়া উপজেলার জাতসাখিনী ইউনিয়নে লেগেছে ভোটের হাওয়া। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দিনরাত গণসংযোগ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন নিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সেই সঙ্গে জনগনের কাছে হাজারও প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিফলেট বিতরণও শুরু করেছেন। গণসংযোগ, উঠোন বৈঠক, পথসভা, শো-ডাউনসহ নানা কৌশলে প্রার্থীরা ইউনিয়নবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। প্রায় দেড় ডজন প্রার্থী আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতিক পেতে মরিয়া হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে যোগ্যতার মাপকাঠিতে এগিয়ে রয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীরমুক্তিযোদ্ধা কথাসাহিত্যিক ও ছড়াকার এসএম ফজলুল হক মাস্টার। ৫১ বছরের আওয়ামীলীগের রাজনীতির উত্থান-পতনের ঝড়ঝাপটায় বিধ্বস্ত এই জননেতার ত্যাগের মূল্যায়ণ চায় এলাকার প্রায় সকল শ্রেণিপেশার মানুষ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসএম ফজলুল হক মাস্টার বলেন, ‘১৯৬৯ সালে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কিশোর বয়সে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সেই স্বাধীন দেশেও জামাত-বিএনপি’র অত্যাচার নির্যাতন নিরবে সহ্য করে দীর্ঘকাল সক্রিয়ভাবে দলের সাথে কাজ করেছি। ২৬ বছর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছি। রাজনৈতিক জীবনে বিরোধী বা বিদ্রোহী কাউকে সমর্থন করিনি। ক্ষমতার লোভে বিরোধী দল বা নেতাদের সঙ্গে কখনও আঁতাত করিনি। দল ক্ষমতায় থাকলেও অবৈধ কোন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা, মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ণ করছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি নির্বাচিত হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
জানা যায়, বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম ফজলুল হক মাস্টার ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ১২ বছর জাতসাখিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বেড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত জাতসাখিনী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২৬ মার্চ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ২৮ মার্চ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশীয় প্রশিক্ষণ এবং সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতের পাতিরামে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে এলাকার প্রবীণব্যক্তিদের কাছে সমাদৃত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। শিক্ষকতা ও রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাও অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে তার বেশকিছু বই পাঠকনন্দিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (কলি প্রকাশনী), রূপসী গায়ের ছন্দা (কলি প্রকাশনী), তুমিই প্রিয় বান্ধবী (কলি প্রকাশনী), ছাড়ায় ছড়ায় মুক্তিসেনা (কলি প্রকাশনী), চল যাই টুঙ্গিপাড়া (ডাংগুলি প্রকাশনী), ফজলুল হকের ছড়া (ডাংগুলি প্রকাশনী)। তাঁর রচিত অধিকাংশ বই মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে উপজীব্য করে। যা বাংলা একাডেমি’র বিগত বছরগুলির বই মেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এসএম ফজলুল হক সামাজিক নানান প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। কাশিনাথপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও শহীদ নুরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যসহ বেড়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং জাগ্রত সংঘ ক্লাব, কাশিনাথপুর খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি, প্রয়াস পাঠাগারে সম্পৃক্ত ছিলেন ও আছেন। এছাড়াও বেড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও জাতসাখিনী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল- এর দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন সময়ে।
কথা হয় ফজলুল হক মাস্টারের সরাসরি ছাত্র ও স্থানীয় ধোবাখোলা করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নিপু রহমতুল্লাহ’র সাথে। তিনি বলেন, জাতসাখিনী ইউনিয়নে বীরমুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট লেখক ফজলুল হক স্যারের বিরুদ্ধে যারা নির্বাচনে আসতে চান, তারা অধিকাংশই তার ছাত্র বা তার অনুজ নেতা-কর্মী। ফজলুল হক স্যার আওয়ামীলীগের প্রবীন ও ত্যাগী নেতা। দল তাকেই মূল্যায়ণ করবে বলে জাতসাখিনী ইউনিয়নের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ প্রত্যাশা করছে। স্যারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও কোনরূপ ক্ষোভ থাকবে না।
চার সন্তানের জনক ফজলুল হক মাস্টার পারিবারিকভাবেও সুখি একজন মানুষ। তার বড় ছেলে এসএম সালাহউদ্দিন হক এমিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় থেকে ¯œাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে এসএম সাফায়েত হক তুর্য ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বড় মেয়ে ফারজানা হক নিপা রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। আর ছোট মেয়ে ফারহানা হক দিপা বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে শিক্ষকতা করছেন কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলে।
তার বড় ছেলে এসএম সালাহউদ্দিন হক এমিল বলেন, ব্যক্তিজীবনে আমার বাবা শিক্ষকতার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেছেন, যা এলাকার সর্বজন বিদিত। দলের জন্য তার ত্যাগের কথা এলাকার সবাই জানেন। আমার বাবা সারাজীবন রাজনীতি করেছেন, কিন্তু কিছু চাননি। এবার এলাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণের জন্যই তিনি চেয়ারম্যানপ্রার্থী হয়েছেন। আশা করছি দল তাকে মূল্যায়ণ করবে।
আর কতখানি ত্যাগের বিনিময়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম ফজলুল হক মাস্টার কে ত্যাগী নেতা হিসেবে মূল্যায়ণ করা হবে জাতসাখিনী ইউনিয়নবাসী তা দেখতে চায়।