বিশেষ প্রতিনিধি : পাবনার ঐতিহ্যবাহী কাজীরহাট (নগরবাড়ী)-আরিচা ফেরি সার্ভিস আবার চালু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ব্যয় কমবে। পরিবহন ব্যবসায়িদের সময় বাঁচবে, ট্রিপ বাড়বে। এতে সবাই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। দেশের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে। একই সাথে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর চাপ কমবে। নগরবাড়ী ঘাট ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুুপরে পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাটে আয়োজিত সুধী সমাবেশে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। পাবনার ঐতিহ্যবাহী (নগরবাড়ী) কাজীরহাট-আরিচা ফেরি সার্ভিস বন্ধের এক যুগ পর আবার চালু উপলক্ষে কাজীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআইডব্লিউটিএ) আয়োজনে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদিক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে যমুনার পাড়ে নিজে মাটি কেটে মুজিব বাঁধ উদ্বোধন করেছিলেন, তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই যমুনা পাড়ের নগরবাড়ী ঘাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে নগরবাড়িতে এসেছিলেন। তখন থেকেই তিনি নগরবাড়ী ঘাটকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি এখানে নৌবন্দর ও মেরিন একাডেমি স্থাপন করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে যমুনার তীরে এই কাজীরহাট (নগরবাড়ী) ফেরিঘাট আবার চালু হলো। এতে উত্তরের ১৬টি জেলার মানুষ উপকৃত হবেন।
নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে ৭টি ডেজার সংগ্রহ করেছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৭টি থেকে ৮টি উন্নীত হয়নি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এত সরকার এলো গেলো, কেউ কোনো ড্রেজার সংগ্রহ করেনি। শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে প্রথমে ১০টি থেকে এখন ৮০টি ড্রেজার সংগ্রহ করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা নৌবন্দর ও নৌযানের জন্য বিনিয়োগ করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা শুধু এই কাজীরহাট-আরিচা ফেরিঘাট নয় আমরা জামালপুরে আরেকটি নৌরুট তৈরি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, আহমেদ ফিরোজ কবীর এমপি, নাঈমুর রহমান দুর্জয় এমপি, অতিরিক্ত সচিব ও চেয়ারম্যান বিআইডব্লিউটিসি সৈয়দ তাজুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পাবনা পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্যরা উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে নগরবাড়ী-আরিচা রুটে ফেরি চলাচল প্রথম শুরু হয়। নগরবাড়ী বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ রুটে প্রথম ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৯ মাস পর ২০০৮ সালের ২ মে এ নৌরুটে ফেরি সার্ভিস পুনরায় চালু করা হয়। ওই দিন কে-টাইপের ‘কস্তুরি’ নামের একটি ফেরি দিয়ে নগরবাড়ী (কাজিরহাট) থেকে যানবাহন পারাপার শুরু করা হয়। কিন্তু এক দিন পর ওই ‘কস্তুরি’ ফেরিটিও বিকল হয়ে পড়লে মেরামতের জন্য তা পাঠানো হয় পাটুরিয়া নৌ-কারখানায়। ফেরি বিকলের অজুহাতে আবারো ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০০৮ সালে চালুর ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই এই রুটে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়েছিল। এখন কাজীরহাট-আরিচাঘাট থেকে প্রথম অবস্থায় ৪ টি ফেরি চলাচল করবে। যানবাহন পারাপারের উপর ভিত্তি করে আরও ফেরি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিআইডাব্লিউটিসি জানিয়েছে।