Sunday, মে ৫, ২০২৪
শিরোনাম
কাশিনাথপুরের ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মতবিনিময় সভাপুন্ডুরিয়ায় রুপকথার আড্ডা বন্ধুমহলের ব্যাতিক্রমী ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিতসাঁথিয়ায় আগুনে কৃষকের ৭ টি ঘর ভূস্মিভুত, মানবেতর জীবন যাপনবেড়ায় কৃষি জমির মাটি ও বালি কাটার দায়ে জেল জরিমানাসাঁথিয়ায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে মে দিবস উদযাপনকরমজায় বিট পুলিশিং ও মতবিনিময় সভাবেড়ায় বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসতিসকা নামাজ আদায়অগ্রনী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা উধাও, গ্রেফতার ৩ কর্মকর্তাপাবনায় বিপুল পরিমাণ টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালিয়ে গেলেন ঠিকাদারসাঁথিয়ায় ডেপুটি স্পিকারের উদ্বোধনকৃত নতুন হাট ভেঙ্গে দিলেন এসিল্যান্ড

বাবা দিবস; বুক জুড়ে বাবার আদর্শ, অলোক আচার্য,

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

আজ বাবা দিবস। এই যে পৃথিবীতে প্রতি বছরই এক একটা নতুন নতুন দিবস যোগ হচ্ছে, তাতে কতটা লাভ হচ্ছে আমার বোধগম্য না। যেমন- মা দিবস বা বাবা দিবস উপলক্ষ্যে কোনো বিশেষ কিছু থাকা উচিত বলে আমার মনে হয় না। কারণ বাবা থাকে অন্তরে। তাকে স্মরণ করার জন্য, ভালোবাসার জন্য কোনো নির্ধারিত দিনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিনই তাকে মনে পরে। তাকে ভালোবাসতে হয়। সন্তানের জীবনে বাবার সাথে একটু দুরত্ব থাকে যতটা ঘনিষ্ট থাকে মা’র সাথে। কারণ পরিবারের ভরণপোষণের কারণেই তাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বাইরে থাকতে হয়। তবে পরিবারের জন্যই তাকে এ কাজটি করতে হয়। আমারও বাবার সাথে এরকমই এক দুরত্ব ছিল। মা এবং বাবার ভালোবাসাকে আলাদাভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হলেও মূলত একে অপরের পরিপূরক। কোন শিশু সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের ভালোবাসা যেমন দরকার তেমনভাবেই দরকার বাবার ভালোবাসা। আসলে শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য একটি ভালোবাসার পরিবেশ খুবই জরুরী। সন্তানকে পরম মমতায় ¯েœহে বুকের সাথে ধরে রাখেন বাবা। বাবার মমতা আর ছায়ায় পরম নির্ভরতায় শিশু বড় হয়ে ওঠে। বাবা মা’র যে অবদান তা যেন একটি দিবসে সীমাবদ্ধ রেখে আমরা সংকীর্ণতা না দেখাই। কিন্তু সন্তান মা বাবার এই পরম মমত্বটুকুর দাম কমই দেয়। আজকাল অবশ্য সেই হার বাড়ছে। দেশে এখন গুণলে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা অনেক পাওয়া যাবে। এসব বৃদ্ধাশ্রমে যারা বাস করে তারাও কারো না কারো মা বাবা। এসব মা বাবা কোন দিবস বোঝে না। বোঝে কেবল সন্তানের মুখ। বছরের একটি দিন হলেও সন্তানকে কাছে পাবার আকুল প্রার্থনা থাকে মনে। কারো সন্তান দয়া করে সে চাওয়া পুরণ করে আবার কারো ভাগ্যে তাও জোটে না। তখন এসব দিবসকে বড় অসহায় মনে হয়। মনে হয় এসব দিবস একটা বড় ধরনের প্রহসন। অবাক ব্যাপার হলো এখানে এমন সব সন্তানদের মা বাবার দেখা মেলে যারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নামী দামি মানুষ হিসেবে পরিচিত। যাদের জীবনের পুরো অবদানটাই মা বাবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মা বাবার অবদান ভুলে যায় এসব অকৃতজ্ঞ সন্তানরা। মাঝে মধ্যে পত্রিকার পাতায় কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার কোন রেল স্টেশন বা বাস ষ্ট্যান্ডে পরে থাকার খবর দেখি। তখন সত্যিকার অর্থে সেইসব সন্তানদের প্রতি এক ধরনের ঘৃণা জন্মে।
প্রতিটি দিবস পালনের পেছনে কিছু ইতিহাস থাকে। বাবা দিবস পালনের পেছনেও কিছু ইতিহাস রয়েছে। যতদুর জানা যায়, বিশে^র ৫২ টি দেশে বাবা দিবস পালন করা হয়। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়। এছাড়া নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯১৩ সালে আমেরিকার সংসদে বাবা দিবসে ছুটির জন্য একটি বিল উত্থাপিত হয়। ১৯২৪ সালে সেসময়কার প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে সমর্থন দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণা করেন। বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হয়। সে হিসেবে এবারের বাবা দিবস ঈদের আনন্দের সাথে মিলে গেছে। আমি জানি তারপরেও সকল সন্তান দিবসটিকে মনে রেখেছে। বিভিন্ন দিবস পালন এখন একটি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। সে হিসেবে বাবা দিবস বা মা দিবস পালন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে শুধু দিবস পালন নয় বরং সত্যিকারের ভালোবাসা শ্রদ্ধা দিয়ে দিনটি কতজন পালন করে সেটাই দেখার বিষয়।
মায়ের আঁচল যদি হয় সন্তানের আশ্রয় আর শান্তির প্রতীক তাহলে বাবার বুক হলো সন্তানের পরম নির্ভরতার প্রতীক। বাবা বেঁচে থাকা পর্যন্ত বটগাছের ন্যায় সন্তানসহ সংসারটাই বুক দিয়ে আগলে রাখে। প্রয়াত নান্দনিক কথাসাহিত্যিক একসময় বলেছিলেন যে পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে কিন্তু একটাও খারাপ বাবা নেই। যে সত্যিকার অর্থেই বাবা সে কোনদিন খারাপ হতে পারে না। কেবল সন্তান জন্মদান করেই বাবার অধিকার লাভ করতে গেলেই তাকে বাবার দায়িত্ব বলা যায় না। বরং বুক দিয়ে চিরটাকাল সন্তানকে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেই বাবার দায়িত্ব পালন করতে হয়। কোন এক লেখায় বাবার ভালোবাসা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। এমনকি কোন মহত্তেরও কোন লেখা দ্বারা সম্পুর্ণ প্রকাশ সম্ভব না। তার অংশটুকুই কেবল উঠে আসে। মা বাবার ¯েœহপূর্ণ বাধনে সন্তানের জীবন পূর্ণতা পায়। কোন একজনের ভালোবাসা না থাকলেও সন্তানের এক অংশ অপুর্ণতা থেকে যায়। আর দিবস দিয়ে কি কোন কাজের মূল্যায়ন করা যায়। প্রতি বছর মা দিবস আসবে, বাবা দিবস আসবে আবার এসব ভালোবাসার জন্য একটা ভালোবাসা দিবসও আসবে। তবে বাবার সাথে সম্পর্ক কোনো দিবস দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।
মায়ের আঁচল ছেড়ে যখন সন্তান বাইরের জগতে পা বাড়ায় তখন তার সঠিক পথ চেনানোর দরকার হয়। তাকে ভালো-খারাপের সাথে পরিচয় করানোর দকরার হয়। তাকে বাইরের সব বিপদ থেকে আগলে রাখার দরকার হয়। সেই কাজটি পরম দক্ষতায় করেন বাবা। শীত,গ্রীষ্ম,বর্ষায় সারাদিন রাত খেটে সন্তানের জন্য খাদ্য,পোশাকের নিশ্চয়তা দেয় সে বাবা। অনেক কষ্ট পেলেও যে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে মেনে নেয় সে বাবা। বাবা- গভীর মমতা মাখানো একটি শব্দ। বাবা শব্দটি সন্তানের মমতা মেশানো আশ্রয়। বৃক্ষের মধ্যে যেমন বটগাছ সবাইকে ছায়া দিয়ে শীতল পরশে জুড়িয়ে রাখে, বাবাও তেমিন তার সন্তানদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে সব বিপদ-আপদ থেকে সন্তানদের রক্ষা করে। সারাজীবন কষ্ট করে সংগ্রাম করে, বাইরে রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে যে মানুষটি পরিবারের প্রতিটি মানুষের মুখের আহার যোগায় তিনি বাবা। বাইরের সব ঝড় ঝাপটা সব বাবার ওপর দিয়ে যায়। তিনি তার পরিবারের ওপর এতটুকু আচড় লাগতে দেন না। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালিত হয়। কিন্তু মা বাবার জন্য ভালোবাসার আলাদা কোন দিবসের প্রয়োজনই হয় না। যে সম্পর্ক রক্তের সে সম্পর্ক কোন নির্দিষ্ট দিনে পরিমাপ করা যায় না। বাবা যখন মাথার ওপর না থাকে তখন বোঝা যায় বাবার গুরুত্ব। গায়কের কন্ঠের সেই গান বুকের মাঝে বেজে ওঠে- ’ বাবা কতদিন দেখিনি তোমায়- কেউ বলেনা আমার বুকে আয়’। সেই আস্থার বুকটি সন্তানের কাছে ততদিনে আর থাকে না।
আমি আজ একজন শিক্ষক। গত পনেরো বছর ধরেই আমি শিক্ষকতা করছি। শিক্ষক হিসেবে আমি সফল না ব্যর্থ সে হিসাব করতে যাবো না। তবে আমি শিক্ষকতা উপভোগ করি। আমি কেন শিক্ষক তার কারণ বোধ হয় আমার জন্মদাতা পিতা। কারণ আমার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই তাকে দেখে আসছি পড়াতে বা শিক্ষকতা করতে। যদিও তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রাইভেট শিক্ষক। তার সেই স্রােতধারা,আদর্শ এবং শিক্ষকতার প্রতি তীব্র অনুরাগ আমি ছেলেবেলা থেকেই ধারণ করেছি। সে কারণেই অন্য ভালো চাকরির সুযোগ তৈরি হলেও আমি শিক্ষকতা বেছে নিয়েছি এবং তা করছি। আমার বাবা প্রচুর প্রাইভেট পড়াতেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। আমাকেও তার সাথে নিয়ে যেতেন। তার অন্য ছাত্রছাত্রীদের সাথে বসিয়ে পড়াতেন। তাকে যে ছাত্রছাত্রীরা ’স্যার’ বলে ডাকতো এই বিষয়টি আমার খুব ভালো লাগতো। যদিও এই মানুষটি বেশি শিক্ষিত ছিলেন না। আবার তিনি মাধ্যমিক শ্রেণিতেও পড়াতেন না। তার ছাত্রছাত্রী ছিল একেবারে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি মাষ্টার নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন এবং আমাকেও সবাই মাষ্টারের ছেলে বলেই ডাকতো। এই ডাক আমার খারাপ লাগতো না। হয়তো এভাবেই একসময় মন থেকে আমি শিক্ষক হয়ে উঠি। আমার লেখাপড়া শেষ হবার পর আমার মনে হতো আমি আমার শিক্ষা জীবনে যা শিখেছি তা যদি শেখাতেই না পারি তাহলে এসব শিখে কি লাভ হলো? অর্থাৎ আমাকে শেখাতে হবে। যার অর্থ আমি শিক্ষকতা করবো। আমার পরিবার থেকেও কোনো বাধা ছিল না। তবে আমার মা’র খানিকটা আপত্তি ছিল। কারণ তিনি সারা জীবন আমার বাবাকে দেখেছেন দারিদ্রতার সাথে লড়াই করতে। শিক্ষকতা তাকে কোনোদিন ভালোভাবে জীবনের অভাবগুলো পূর্ণ করতে দেয়নি। ফলে আমার জীবনেও যে এর বেশি পরিবর্তন হবে না সে আশঙ্কা ছিল তার মনে। আমি সেসব গায়ে মাখিনি। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং সবশেষে চাকরি পেয়েছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাবা আজ নেই। তবে তিনি জানেন আমি তার আদর্শ ধারণ করতে পেরেছি ভালোভাবেই। আজও মানুষ আমাকে দেখিয়ে বলে, ঐ যে মাষ্টারের ছেলে। আমি গর্ব বোধ করি। একজন শিক্ষকের সন্তান হিসেবে আমি সত্যিই গর্বিত।

 

অলোক আচার্য
শিক্ষক ও মুক্তগদ্য লেখক
পাবনা।
মোবাইল- ০১৭৩৭০৪৪৯৪৬

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর