আরিফ খাঁন: বর্ষা মৌসুম আসার আগে থেকেই পাবনা বেড়ার পদ্মা-যমুনা, হুরাসাগর ও সাঁথিয়ার ইছামতি, কাকেশ্বরী, আত্রাই নদীসহ খাল বিলে ব্যাপক পরিমাণে পানি বাড়ছে। তবে এবছর কদর বেড়েছে ডিঙ্গি নৌকার দামও কিছুটা বাড়তি বলে খোঁজ নিযে জানা গেছে।
বেড়া যমুনা নদীর তিনটি পয়েন্টে এখনও চলছে ভাঙন। ইতিমধ্যে বেড়ার চরাঞ্চলের ফসলি জমিতে পানি উঠতে শুরু হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে এই এলাকার নৌকার মালিকরা নতুন নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ শুরু করায় স্থানীয় মিস্ত্রীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই নদীর পানি থৈই থৈই করায় নৌকা ব্যবসার সাথে জড়িতরা আগাম প্রস্তুতি নেওয়ায় মিস্ত্রীদের কদর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সাথে কাঠ চেরাইয়ে ব্যাস্ততা বেড়েছে ‘স’মিল শ্রমিকদের।
ছয়টি নদী ও অর্ধশতাধিক বিল বেষ্টিত পাবনার বেড়া উপজেলার রয়েছে অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল। তার মধ্যে এ উপজেলায় প্রায় বাইশটি চরে রয়েছে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস এইসব চরে শুকনো মৌসুমে যোগাযোগের জন্য পায়ে হাঁটার পথ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে তা একেবারেই থাকে না। জীবন ও জীবিকার জন্য নৌকা যেন নিত্যদিনকার অপরিহার্য জিনিস। প্রতিটি গ্রাম প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি আলাদা আলাদা দ্বীপ। তাই বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে একাধিক করে নৌকা। এসব নৌকাই তাদের চলাচলের প্রধান ভরসা। করোনা পরিস্থিতির কারনে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসা বন্ধ থাকলেও জীবন জীবিকার জন্য অসুখে বিসুখে জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালে পৌছানো সব কাজেই প্রয়োজন হয় নৌকার। তাছাড়া মাছ ধরা তো আছেই। তাই এ মৌসুমে নৌকা কেনা-বেচা ও পুরাতন নৌকা মেরামতের ধুম পরে যায় এ উপজেলায়। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নেই নৌকার ব্যবহার হয়। তার মধ্যে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন, কৈটলা, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, নগরবাড়ী, রূপপুর, ঢালারচর এসব ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ইতিমধ্যেই বেড়া চরাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা ডুবে যাচ্ছে। উপজেলার নাকালিয়া বাজার সংলগ্ন যমুনা নদীর পারে পুরাতন নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে নৌকা কারিগররা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এ উপজেলায় প্রায় ২৫-৩০ টি কারখানায় নৌকা তৈরী হয়। যেসমস্থ নৌকা ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী সেগুলোর কাঠ দিয়ে তৈরী করছে চৌকি। নৌকার কাঠের তৈরী চৌকি খুব টেকশই হওয়ায় এর চাহিদা ও দাম বেশি।
সাঁথিয়া উপজেলার কয়েকটি হাট বাজার ও ‘স’মিলে দেখা গেছে মিস্ত্রীদের নৌকা তৈরীর ব্যস্ততা। তবে এ উপজেলার মানুষের যোগাযোগের চেয়ে মূলত মাছ ধরা পাট কাটা কাজের জন্য নৌকা বেশি প্রয়োজন হয় বলে জানা গেছে। এ উপজেলায় ইছামতি, কাকেশ্বরী, আত্রাই নদী ছাড়াও রয়েছে জেলার মধ্যে অন্যতম মুক্তার বিল, কাটিয়াদহ বিল, গজারিয়া বিল, বাইটেখালি বিল, জোয়ারে বিলসহ কয়েটি বড় বড় বিল। বেড়া আমিনপুর বাজার বাসস্ট্যান্ডের আশরাফুল ইসলামের কারখানায় দেখা যায় নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। তার পাঁচটি কারখানায় বিশ জন মিস্ত্রী কাজ করছে। তৈরি নৌকাগুলো সারিসারি রাখা হয়েছে। আর নিজেও ব্যস্ত নতুন নৌকা তৈরিতে। আলাপকালে তিনি জানান, ‘কম দামের নৌকা তৈরিতে জল কড়ই, ডেম্বুল, কদম ইত্যাদি কাঠ ব্যবহার করা হয়। যার দাম পরে ২ হাজার ৫০০ থেকে সাইজ অনুসারে ৯ হাজার টাকার নৌকা তৈরী হচ্ছে। আর প্লেনসিটের তৈরি নৌকা ৮ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’
আমিনপুর বাজারে নৌকা কিনতে আসা চরনাগদাহ চরের বাসিন্দা শেখ আলী জানান, ‘দুই সপ্তাহ আগেই নৌকা কিনার দরকার আছিল এহন না কিনে আর পারছি না। গরুর ঘাস কাটা মাছ ধরা ও পারাপাড়ের জন্য নৌকা কিনতে আইচি বর্ষার সময় নৌকা ছাড়া আমরা অচল