Sunday, মে ৫, ২০২৪
শিরোনাম
কাশিনাথপুরের ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মতবিনিময় সভাপুন্ডুরিয়ায় রুপকথার আড্ডা বন্ধুমহলের ব্যাতিক্রমী ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিতসাঁথিয়ায় আগুনে কৃষকের ৭ টি ঘর ভূস্মিভুত, মানবেতর জীবন যাপনবেড়ায় কৃষি জমির মাটি ও বালি কাটার দায়ে জেল জরিমানাসাঁথিয়ায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে মে দিবস উদযাপনকরমজায় বিট পুলিশিং ও মতবিনিময় সভাবেড়ায় বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসতিসকা নামাজ আদায়অগ্রনী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা উধাও, গ্রেফতার ৩ কর্মকর্তাপাবনায় বিপুল পরিমাণ টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালিয়ে গেলেন ঠিকাদারসাঁথিয়ায় ডেপুটি স্পিকারের উদ্বোধনকৃত নতুন হাট ভেঙ্গে দিলেন এসিল্যান্ড

রোদ পোহানো উৎসব : তবু আনন্দ জাগে …

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

আবদুল্লাহ আল মোহন

১.রোদ পোহানোর মোহন আসরে বসে রৌদ্দুর হতে চাওয়াটা মোটেই বাড়াবাড়ি নয়। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় ‘অমলকান্তি রৌদ্দুর হতে চেয়েছিলো’ চরণ স্মরণে আমরা ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজের শিক্ষকবৃন্দ তাই পরম রমণীয় এই শীতে সেই রোদে ‘কিছুক্ষণ আরও না রহিলে পাশে’ বসে শীতকালীন অবকাশ শেষে নতুন বছরের আলোর পথযাত্রার পরিকল্পনা করছিলাম জ্ঞানের ‘আলোয় ভুবন ভরিয়ে দিতে’। ২০২১ সালের প্রথম কর্মদিবসে, জানুয়ারির ২ তারিখ শনিবার জমজমাট ভরে উঠেছিলো আমাদের আলোর পাঠশালা প্রাঙ্গণ। রোদ মানে তো আলো। আর আলো মানেই নতুন দিনের আশা জাগানিয়া স্বপ্ন। আবার জ্ঞান আর আলো সমার্থক হয়ে ওঠে জীবনের জন্যও। কালস্রোতে ভেসে যাওয়া স্মৃতির মাঠে আনন্দ আলোয় আমাদের সম্মিলন ছিলো শুধুই প্রাতিষ্ঠানিক নয়, প্রাণের আবেগে ভরা, মনমোহন অভিনিবেশে। মোহনানন্দে সুরভজনায় নিমগ্ন মন ভোরের আলোয়, ‘আমার রাত পোহালো, বাঁশি …’।২.সম্মানিত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন মহোদয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক বলেই বোধকরি সৃজনীচিন্তায় ও কর্মে আমাদের সম্পর্কের সম্প্রীতিকে জোরালো করতে রোদ পোহানোর মতোন মিষ্টি রোদে ভাবনা সৃষ্টির আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, অভিনব আনন্দ সমাবেশ উৎসবের আয়োজনে নেতৃত্ব দেন। সবসময়ের মতোই পাশে ছিলেন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সুযোগ্য সম্পাদক এবং দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ঋদ্ধিমান ব্যক্তিত্ব ড. মো: বজলুর রহমান রফিক। সেই সাথে এই অনবদ্য আয়োজনকে সফল করে তুলতে নিরলস ইতিবাচক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিষ্টভাষী আতিয়া খন্দকার, বাংলা বিভাগের আরেকজন সহযোগী অধ্যাপক সদালাপী নূপুর দত্ত, কলেজের সকল কাজের আবশ্যিক সহযোগী এবং আস্থাশীল ‘কাজ পাগল’ শিক্ষক উদ্ভিবদবিদ্যার প্রভাষক আবদুল হাই এবং আরো কয়েকজন। ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ গড়ে তুলতে সকলের প্রিয় আতিয়া খন্দকার আপার মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় সরস হয়ে ওঠে আয়োজনটি যেমন, তেমনই আবার ‘আলোর নাচন পাতায় পাতায়’ ঢেউ জাগানো শিক্ষক নূপুর দত্ত ম্যাডামের কথামালা হয়ে ওঠে আনন্দময়। আনন্দ আলোর মাত্রাকে ক্ষণে ক্ষণে উচ্ছ্বসিত করে তোলেন বজলুর রহমান স্যার তার বিনম্র সরস কথকতায়, বর্ণাঢ্য ভঙ্গিতে-ঈঙ্গিতে। মুজিববর্ষে জাতির পিতার আদর্শের আলোয় পথ চলতে সকলেই দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।৩.রোদে ঝলমলে সকালে মাঠে ঢুকতেই সুরস্পন্দনটি কানে ভেসে এলো-‘দেখো আলোয় আলোয় আকাশ, দেখো আকাশ তারায় ভরা’। কারণ রাতের সব তারা মিশে থাকে দিনের আলোয়। তারাদের সাথে সব রঙ নিয়ে দিনের আলো উপস্থিত হয় অন্ধকার ভেদ করে। জীবন সংসারে তাই আলোর কামনা এত তীব্রতর হয়ে ওঠে। সেই আলোকমেলায় আমাদের প্রীতির সমাবেশ হয়ে থাকে সবসময়ই বহুল প্রত্যাশিত। যেমনটি কলেজে প্রবেশকালেই মনের আকাশের স্বজন হারানোর, করোনাজনিত হতাশার মেঘ ক্ষণিকের জন্যে হলেও হারিয়ে গেলো। কলেজ প্রাঙ্গণকে মনে হলো- এটি যেন জগতের আনন্দযজ্ঞে নিমন্ত্রণ জানানোর গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে সযতনে সাজানো সুরুচির মিলনস্থল। আর তাই তো আয়োজনের সূচনায় সুকল্যাণ আর সুন্দরের সকল শুভ কামনা জানিয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন উচ্চারণ করেন এই করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এই প্রীতি সম্মিলন, মধুময় আড্ডার স্মৃতি বছরব্যাপী সকল কাজের প্রেরণা জোগাবে। তিনি জানাতে ভোলেন না, মুজিবজন্মশতবর্ষে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পরিপালনের কথাও, বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীকে সকলের জন্য আরো কিছু ভালো কাজ করার আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা। অধ্যক্ষ মহোদয়ের আহ্বান ছিলো বৈশ্বিক মহামারীর নিরাশার অন্ধকারকে দূর করতে আমাদের সম্মিলিত চেষ্টা হবে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অন্তরে ধারণ করে ভয়কে জয় করার, যার যার নিজের অবস্থানে থেকে মানসম্পন্ন শিক্ষা সুনিশ্চিত করার গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করা। কলেজের ম্যাগাজিনটির নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রাখা এবং মানসম্পন্ন রচনার সম্ভার সৃষ্টির প্রতি নজর দিতে ম্যাগাজিন কমিটি এবং শিক্ষকদের স্মরণ করিয়ে দেন। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গকৃত ম্যাগাজিনের লেখাগুলো মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকেন্দ্রিক যেন হয়- সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। করোনাজনিত কোন বিধিনিষেধ না থাকলে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার চেষ্টা হবে বলে জানান। আয়োজনের সম্মানিত অতিথি ছিলেন আমাদের সকলের প্রিয় ব্যক্তিত্ব জীবনরসিক প্রাণের মানুষ লাভলু ভাই। আমাদের পরম স্বজন, অভিভাবক অধ্যক্ষ মহোদয়ের স্বপ্নসহচর জীবনসঙ্গী জনাব আতিকুল ইসলাম লাভলু তার বরাবরের মতোই সজীব কথামালায় দারুণ উদ্দীপনা সৃষ্টি করেন, ভাসানটেক কলেজের প্রতি প্রাণের টানের গোপন কথাটি জানান দিতেও ভোলেন না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের সেতুবন্ধনকে অনন্য বলে তুলে ধরে সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান, সঠিক জ্ঞানের আলোয় মানবসম্পদে পরিণত হয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকদের নানাবিধ সৃজনীপ্রচেষ্টার উদাহরণও তিনি উল্লেখ করতে ভোলেননি। তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য সকলের জন্য ছিলো আলোর ইশারায় পরিপূর্ণ।৪.আলোয় অবগাহন যে কতটা আনন্দময় হতে পারে সেটা টের পেলাম সারাটি দিনই কলেজ প্রাঙ্গণে বসে সকলের সাথে আলাপচারিতায়, ভাব বিনিময়ে। প্রকৃতির সাথে বাঁচার গোপন শপথও বুঝি নিয়ে ফেলেছি আমরা। তা না হলে জীবন তো পূর্ণতা পায় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে বৃক্ষছায়ায় জ্ঞানালোচনার ছবিও মনঘরের দরোজায় কড়া নাড়ে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে প্রকৃতির আলোক প্রক্ষেপণ জীবন সাধনাকে সুর দেয়, প্রাণ জাগায়। পাণ্ডুলিপি যেমন আগুনে পোড়ে না তেমনই সকালের আমুদে রোদে আমাদের পিঠ পোড়ে না, চোখ জ্বলে না তীব্রতায় বরং সোনা রোদ যেন জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে প্রকৃতিতে, ভেজায় আমাদের মনের মাটি, আশার বীজের অঙ্কুরোদগমন ঘটে। নবীন আলোর স্বপ্ন-রঙের আহ্বানে জয়গান গাই নতুন জীবনের। বিশেষত এই ভয়াবহ করোনাকালের নিরাশার অন্ধকার সময়ে। মাঠের সংক্ষিপ্ত আয়োজন শেষে আমরা মিলিত হই শিক্ষক মিলনায়তনে। সেখানেও প্রাণের আবেগের উচ্চারণে উঞ্চতায় ঢেকে যায় শীতের আমেজ। অধ্যক্ষ মহোদয় জানান মুজিবশতবর্ষের সময় বর্ধিত করে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পুর্তিও পালিত হবে এ বছর। মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সর্বোত্তমভাবে আয়োজনের গভীর আশাবাদ প্রকাশ করে জানান সম্প্রতি কলেজ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্মারক ম্যুরাল ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ স্থাপন করা হয়েছে এবং এই উদ্যোগ মাননীয় এমপি মহোদয়সহ সকলের প্রশংসাধন্য হয়েছে। এই চেতনাধারা প্রবাহমান রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, লাল-সবুজ পতাকার চেতনা বুকে ধারণ করেই আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য নিবেদিত হতে হবে। বছরব্যাপী নানান আয়োজনের কর্মপরিকল্পনা নিয়েও তিনি আলোচনা করেন, শিক্ষকদের মতামত শোনেন। সকলকেই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ বৃদ্ধির চলমান প্রক্রিয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে জানার ব্যাপারে বইপাঠসহ সৃজনী উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। অনলাইনে প্রতিযোগিতার আয়োজনেও ভূমিকা রাখতে বলেন। আর বিশেষ কৃতিদেরকে পুরস্কার হিসেবে বই প্রদানের কথাও জানান। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সকল শিক্ষককে প্রদান করা হয় সবসময়ের সেরা উপহার বই। মুজিবশতবর্ষের স্মারক প্রীতি উপহার হিসেবে অধ্যক্ষ মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভাসানটেক সরকারি কলেজের মুজিবশতবর্ষ কমিটির আহ্বায়ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মোহন রচিত, সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সম্পর্কের সেতুবন্ধনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা’ বইটি সকলের হাতে তুলে দেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন। বই প্রদানের সুরুচির সস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এক অনন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন।৫.রোদ পোহানোর সকালটা আমাদের স্মৃতিকাতর করে। বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা মনে করায়। শীত এলে উঠোনে মাদুর পেতে পরিবারের সবাই মিলে রোদ (সূর্যের আলো) পোহাতে পোহাতে সকালের নাস্তা আর পিঠা-পুলি খাওয়ার স্মৃতি গ্রামীণ সমাজের প্রত্যেকেরই কম-বেশি আছে। মা আর মামাবাড়ির স্মৃতি বড় মধুর। সেই নস্টালজিক জীবনে এই আয়োজন নিজেকে খুঁজে ফেরা, গ্রাম বাংলার প্রকৃতির বৈভবময়তাকে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা। রোদের পরশ পেয়ে বড় হয়ে ওঠা আমরা অনেকেই জানি না জীবনের সাথে প্রকৃতির সংযোগ উপকারিতার কথা। সকালের রোদ যে শরীরের জন্য কতটা উপকারে আসতো তা হয়ত অধিকাংশ গ্রামীন মানুষই জানতো না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সংস্কৃতি। উঠোনের উপর উঠে গেছে ঘর। তাই সকালে রোদ পোহানো এখন আর তেমন একটা হয়ে ওঠে না। তাও যেটুকু সকালের রোদ গায়ে মাখতে পারে গ্রামের মানুষ, শহরে সেটা আরও কম। শারীরিক পরিশ্রম এখন অধিকাংশেরই কমে গেছে। এ কারণেই দিনে দিনে মানুষের মধ্যে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। নতুন নতুন রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। এত যত্নের পরেও শহুরে বাচ্চারা একটু পান থেকে চুন খসলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস। এর অভাবে হাড়ে ও ত্বকে সমস্যা হতে পারে। হতে পারে ক্যানসারও! রোদ পূরণ করে আমাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির। তাইতো চিকিৎকগণ বলে থাকেন- রোদ পোহান, ব্লাড ক্যানসারের ঝুঁকি কমান। আমাদের দেশে বহুকাল থেকেই তেল মেখে রোদ পোহানোর রেওয়াজ। বিচে শুয়ে রোদ পোহানো, রোদে গরম জলে স্নান করলে যে শরীর ভাল থাকে সে কথাও কারও অজানা নয়। এমনকী, সূর্যের আলোয় রাখা হালকা গরম জল নাকি ব্যাকটেরিয়া মুক্ত থাকে বহুক্ষণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ প্রশ্ন করেছেন- জানেন কি ব্লাড ক্যানসার রোধ করতেও সাহায্য করে সূর্যরশ্মি? এমনটা দাবি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সান দিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক সেড্রিক গারল্যান্ড। কারণে শরীরে সূর্যের আলো লাগানো তাই অত্যন্ত জরুরি। তবে সেই সূর্যের আলোটা অবশ্যই হতে হবে সকালের এবং বেলা ১১টার পরে কোনমতেই নয়। কারণ দিনের অন্য সময়ের রোদে থাকে অতি বেগুনী রশ্মিসহ নানা ক্ষতিকর আলোক তরঙ্গ। এগুলো আবার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের জন্ম দিতে পারে। তত্ত্ব আর তথ্যের আলো-ছায়ায় পথ চলা আপাতত স্থগিত থাক। ফিরে আসি প্রাণের আঙ্গিনায়, প্রিয় প্রাঙ্গণে।৬.ব্যয় ব্যবস্থাপনাতেও আয়োজনটি ছিলো ‘পাবো সামান্যে কী তার দেখা’ অর্থাৎ মহাত্মা লালনের যৎসামান্য দর্শনের রূপায়ন। পরিহার করা হয় বাহুল্যের সংযোজন। তাই দেখা মেলেনি সকালের রোদের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকা গুড়-মুড়ি, পিঠা-পায়েসের। মধ্যাহেৃর খাবার ছিলো খিচুরির সাথে ডিম। তবে শিক্ষকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু খাবার নিয়ে আসেন ফলে আয়োজন সমবেত প্রচেষ্টায় ভীষণই জমে ওঠে। অল্পতেই সন্তুষ্ট মন ব্যয়বহুল খাবারের চেয়ে অভিলাষী ছিলো আনন্দ উপভোগে। আর তাইতো ভর করেছিলো কবিতার সুরসুধা। ‘অভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই’ প্রত্যাশা করেছিলেন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। কবির ‘অভিমানের খেয়া’ থেকে কবিতার আশাবাদ আমরাও গ্রহণ করে বলি-‘নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা –এই খেলা আর কতোকাল আর কতোটা জীবন!কিছুটা তো চাই – হোক ভুল, হোক মিথ্যে প্রবোধ,অভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই।’আর তাই রোদ পোহানো উৎসবের আয়োজনের মতোই আমাদের সকল শুভ প্রচেষ্টা হোক আরেকটু কিছু ভালো করার গভীর আন্তরিক প্রত্যয়ী, শুভবোধের সক্রিয় অংশীদারিত্বে ভরপুর।৭.অনেকেই কেবল মেঘ খোঁজেন, মেঘের আড়ালে আলোর হাসিকে বোঝেন না, মেঘের পরের রঙধনুকেও চেনেন না। আমি তাই সন্ধ্যার মেঘমালা নয়, সকালের আলোর আশাবাদী চাষাবাদী কৃষক। আমার মাঠে স্বপ্ন সবুজ ফসলের আনন্দ ঢেউ খেলে যায়, বাউল মনমোহন দাস চিত্তানন্দে নৃত্য করে তাদের সনে, যারা উদার হতে শেখা আকাশের পানে তাকাতে জানে। আমি প্রবলভাবে আশাবাদী মানুষ বলেই করোনাজনিত নানান নিরাশাকালে এই আলোর উৎসবের আনন্দে জীবনের গান গাই, রবি বাউলের সুর জপি- ‘তবু আনন্দ জাগে’। ররি ঠাকুরের চরণ পুরোটাই স্মরণের জানালায় রোদ হয়ে আসে, অন্ধকার বিনাশে।-‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ॥তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে ॥ তরঙ্গ মিলায়ে যায় তরঙ্গ উঠে, কুসুম ঝরিয়া পড়ে কুসুম ফুটে।নাহি ক্ষয়, নাহি শেষ, নাহি নাহি দৈন্যলেশ– সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে ॥’৮.আর তাই সব মিলিয়ে বছরের শুরুতেই আশার আলো জ্বালানো, জাগানো রোদ পোহানো উৎসবের আয়োজনটি হয়ে উঠেছিলো ব্যতিক্রমধর্মী, অনন্য এবং এক কথায় অভূতপূর্ব। বছরের শুরুতেই এমন একটি আনন্দঘন প্রীতিসমাবেশের নানাবিধ আয়োজনের সম্মিলনে দারুণ সফল অনুষ্ঠান উপহার প্রদানের জন্য অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন মহোদয়সহ শিক্ষক পরিষদ এবং সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে জানাই আন্তরিক সাধুবাদ, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

আবদুল্লাহ আল মোহন : ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা

শেয়ার করতে এখানে চাপ দিন

সর্বশেষ খবর